শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৭, ২৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৫৮, ২৭ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
এমন তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
রবিবার (২৫ মে) ট্রাইব্যুনালে চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের সময় তিনি ৪ ও ৫ আগস্টের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। অভিযোগপত্রে এই ঘটনাগুলোর বিশদ বিবরণ রয়েছে।
গণভবনের উত্তপ্ত রাত: চিফ প্রসিকিউটর জানান, ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর। সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা।
বৈঠকে প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। জবাবে তিনি কঠোর ভঙ্গিতে বলেন, যা হওয়ার হবে, আমি ক্ষমতা ছাড়ছি না। এরপর তিনি সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দেন, মেরুদণ্ড শক্ত করে বিক্ষোভ দমন করো।
তাজুল ইসলামের মতে, এই নির্দেশের পর তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, গুলি চালিয়ে কিছু মানুষ হত্যা করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তিনি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোরও পরামর্শ দেন। এতে বিমানবাহিনী প্রধান তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি (তারিক) আপনাকে ডুবিয়েছেন, এবং আরো ডুবাবেন।
‘গ্যাং অব ফোর’-এর পরামর্শ: চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেন, সেদিন রাতে শেখ হাসিনাকে কঠোর অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতা, যাদের তিনি অভিহিত করেন ‘গ্যাং অব ফোর’ হিসেবে। তারা হলেন-ওবায়দুল কাদের (সাধারণ সম্পাদক), আসাদুজ্জামান খান কামাল (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), আনিসুল হক (সাবেক আইনমন্ত্রী) ও সালমান এফ রহমান (প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা)। তাদের পরামর্শ ছিল, কোনোভাবেই নরম হওয়া যাবে না।
৫ আগস্ট সকাল: পরিস্থিতির চূড়ান্ত নাটকীয়তা: ৫ আগস্ট সকালে গণভবনের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, পুলিশের অস্ত্র-গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, বাহিনী ক্লান্ত। তখন সেনা কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন।
এই পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, এরপর তাকে গণভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সামরিক কর্মকর্তারা সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং পুনরায় পদত্যাগের অনুরোধ জানান। তখন ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির কারণে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ঢাকামুখী ছিল।
পরিবারের হস্তক্ষেপ ও শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত: শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। চিফ প্রসিকিউটর জানান, একপর্যায়ে শেখ রেহানা শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন, কিন্তু তাতেও তিনি অনড় থাকেন।
পরে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জয়কে বলেন, আপনার মাকে বাঁচাতে হলে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। জয় পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে শেখ হাসিনাকে বোঝান এবং তার কথাতেই শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন।
শেখ হাসিনা একটি বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করে প্রচারের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সেনা কর্মকর্তারা তাতে সম্মতি দেননি।
শেষ মুহূর্তে দেশত্যাগ: চিফ প্রসিকিউটর বলেন, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে প্রস্তুতির জন্য মাত্র ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। কারণ লাখো বিক্ষোভকারী গণভবনের দিকে এগিয়ে আসছিল।
৫ আগস্ট বেলা ১১টায় আইএসপিআর বিটিভির মহাপরিচালককে জানায়, সেনাপ্রধান দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। যদিও সেনাপ্রধান শেষমেশ বিকেল ৪টায় ভাষণ দেন। তার আগেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ