শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১৪, ২৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২১, ২৯ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর অন্তত তিনটি হত্যাকাণ্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ মধ্য বাড্ডায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন হত্যায় যে অস্ত্র ব্যবহার হয়, তা সুব্রতর ছিল বলে তথ্য মিলছে। এ ছাড়া সুব্রত বাইনের কাছে যে স্যাটেলাইট ফোন পাওয়া গেছে, তার মাধ্যমে কীভাবে ও কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তা জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম অপরাধ ঘটানোর জন্য নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় এই সদস্যরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে আসছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরো অনেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার এবং আরো বিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সুব্রত বাইনকে আট দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গ্রেপ্তার মোল্লা মাসুদ, সহযোগী শুটার এমএএস শরীফ ও আরাফাত ইবনে মাসুদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন।
এর আগে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক রিয়াদ আহমেদ। সেখানে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় থাকা সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদ সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করতেন। সুব্রত বাইন ওই সময়ে খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করেন। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা ভোগ করছিলেন। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারো সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেন।
নিজের কাছে অস্ত্র রাখার কারণ জানালেন সুব্রত বাইন: এদিন সুব্রত বাইনসহ চার আসামিকে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তাদের রাখা হয় সিএমএম আদালতের হাজতখানায়। বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে কঠোর পুলিশ প্রহরায় তাদের আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। এ সময় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরানো ছিল। পরে কাঠগড়ায় নিয়ে তাদের হেলমেট ও এক হাতে হাতকড়া খোলা হয়।
রিমান্ড শুনানি শুরুর আগে আদালতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সুব্রত বাইন বলেন, ‘আপনারা ছবি নেন, ভিডিও নেন; কিন্তু হলুদ সাংবাদিক হইয়েন না। যেটা সত্যি, তদন্ত করে আপনারা সেটা লেখেন। ১৯৮৯ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে লিখতেছেন। আমারও তো পরিবার আছে। আমার নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের আপনারা ধরতে পারেন না। আমি কখনো প্রতিবাদ করি নাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিজে বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি। কেউ যদি বলে রাখি না, তাহলে সেটা মিথ্যা হবে। আমি নিজেকে জানি। নিজেকে চিনি। ৬১ বছর হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, সাংবাদিকরা এত খবর রাখেন, আড়াই বছর আগে আমায় আয়না ঘরে রাখে, সেই খবর নাই।
২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে এসে আয়নাঘরে রাখা হয় জানিয়ে বলেন, সেখানে রড দিয়ে পিটিয়েছে। ৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। রিমান্ড আদেশের পর সুব্রত বাইন আদালতকে বলেন, আমার নামাজ যেন কাজা না হয়। তখন আদালত পুলিশকে ‘বিষয়টি’ দেখতে বলেন।
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া বলেন, সুব্রত বাইন আজকে মিডিয়ার সৃষ্টি। চারদলীয় জোট সরকার এই লিস্ট করে। এরপর আর কোনো সরকার কোনো লিস্ট করেনি। এই আসামিকে ভারতে তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে কী তথ্য পাওয়া গেল-জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস কবির বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে রোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ত্র-গুলি ও টাকার উৎস জানার চেষ্টা চলছে। এলাকাভিত্তিক তাদের সদস্যদের সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে গ্রেপ্তার সুব্রত ও মাসুদ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, এমএএস শরীফের হাতিরঝিলের একটি বাড়িতে তারা নিয়মিত বৈঠক করেন। সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা আছে। পরে হাতিরঝিল থানার নতুন রাস্তা এলাকা থেকে একই দিন বিকাল ৩টার দিকে আসামি এমএএস শরীফ ও আরাফাত ইবনে মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ