শিরোনাম
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৫৫, ২৯ মে ২০২৫
১৯৯৭ সালে আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘টেস্ট অব চেরি’র পর এই প্রথম কোনো ইরানি নির্মাতা পেলেন পাম দ’অর। বিশ্ব চলচ্চিত্রে প্যারালাল সিনেমার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হয় এই সম্মান।
বিজয়ের গৌরব নিয়ে গত সোমবার তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান জাফর পানাহি। বিমানবন্দরে আগে থেকেই ভিড় করেছিলেন শত শত ভক্ত ও অনুরাগী। তাঁকে দেখে কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন, কেউবা স্লোগান দেন। অনেকে আবার ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন কানজয়ী নির্মাতাকে।
ইরানি পরিচালক মেহেদী নাদেরি সেই দৃশ্যের ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, “ইরানের স্বাধীন সিনেমার শিরায় তাজা রক্ত।”
তবে আন্তর্জাতিক এই সাফল্যের পরও ইরানের সরকারি গণমাধ্যমগুলোতে পানাহির অর্জন নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। কারণ, গত তিন দশক ধরে তিনি ইরান সরকারের বিরুদ্ধে শিল্পীর স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছেন। এ লড়াইয়ের কারণে তাঁকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা এসেছে সিনেমা বানানো, সাক্ষাৎকার দেওয়া, এমনকি বিদেশ ভ্রমণের ওপরও।
তবু দেশ ছাড়েননি জাফর পানাহি। ইউরোপ বা আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ইরানই তাঁর সংগ্রামের মঞ্চ, এখানেই তিনি থেকে যাবেন, সিনেমা বানাবেন, প্রতিবাদ করবেন।
কানজয়ী সিনেমা ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’-এ উঠে এসেছে তাঁর নিজের কারাবরণের অভিজ্ঞতা। গল্পে দেখা যায়, পাঁচ রাজনৈতিক বন্দী এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে, যে কি না জেলখানায় তাদের ওপর নির্যাতনের জন্য দায়ী বলে তারা বিশ্বাস করে। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৈতিক দ্বন্দ্বে পড়তে হয় তাদের।
এই সিনেমা ও পানাহির জয় শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নয়, কূটনৈতিক পরিসরেও আলোড়ন তুলেছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারট মন্তব্য করেছেন, “এই পুরস্কার ইরানি শাসকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক অনন্য নিদর্শন।”
ইরান এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। এর প্রতিবাদে ফ্রান্সে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেন, “আমি শিল্প বিশ্লেষক নই, তবে আমরা মনে করি, শিল্পকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।”
তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে জাফর পানাহির এই জয় এক নতুন আশার প্রতীক— যেখানে শিল্প, প্রতিবাদ আর স্বাধীনতার দাবি একসাথে উচ্চারিত হয়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ