শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:২২, ৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ২২:২৩, ৭ মে ২০২৫
দুই দেশেরই ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ভারতঘনিষ্ঠ শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এরপর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক আদর্শে গভীরভাবে বিভক্ত সমাজ ও দেশকে পরিচালনার চেষ্টা করছে এ সরকার। এরমধ্যে ভারতের প্রতি জনমনে বিরূপ মনোভাবও বাড়ছে—বিশেষ করে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ এবং ভারতীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগের কারণে। ভোটের ম্যান্ডেট না থাকা এই অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে জনগণের জাতীয়তাবাদী চাপের মুখে, অন্যদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক প্রত্যাশার চাপে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হিমশিম খাবে। ধর্মীয় ইস্যুও বড় হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের দিকে ঝুঁকছে তালেবান সরকার
গত জানুয়ারিতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। বোঝা যাচ্ছে যে ভারত এখন পাকিস্তানের আফগান নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিতে প্রস্তুত। এর আগে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিভাগের যুগ্ম সচিব জে পি সিং প্রথমবারের মতো কাবুলে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইয়াকুব হচ্ছেন তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র। সম্প্রতি আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে না পাকিস্তানের।
সতর্ক নিরপেক্ষতায় শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা প্রকাশ্যে হয়তো নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে, তবে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে নীরবে সমর্থন দিতে পারে কলম্বো। কিন্তু, কাশ্মীর ইস্যু মুসলিম নিপীড়নের প্রেক্ষিতে উপস্থাপিত হলে, দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে, যা এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় নেপাল
নেপাল হয়তো ভারত–চীন ভারসাম্য নীতিই অনুসরণ করবে, তবে সাম্প্রতিক সীমান্ত বিরোধ ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্কের কারণে ভারত কাঠমান্ডুর নিরপেক্ষতাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। নেপালের অনেক নাগরিক ভারতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, যা দিল্লির প্রতি একটি অর্থনৈতিক নির্ভরতা তৈরি করে। এটি ভারতের কূটনৈতিক চাপের হাতিয়ার হতে পারে।
ভুটান ও মালদ্বীপ: কৌশলগত দ্বিধা
ভুটান ভারতের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র, তাই দেশটি ভারতপন্থী অবস্থান নেবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে ভারতের মনোযোগ অন্যদিকে সরলে- চীন ভুটানের সীমান্তে ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, মালদ্বীপে কাশ্মীর ইস্যু ইসলামপন্থী আবেগকে উসকে দিতে পারে। একইসঙ্গে ভারত মহাসাগরে সামরিক উত্তেজনা বাড়লে মালদ্বীপের ‘হেজিং স্ট্র্যাটেজি’ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্যাহত হবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগ
ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হলে এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেও। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর চীনের মোকাবেলায় আঞ্চলিক ভারসাম্য তৈরির নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু, একটি দীর্ঘমেয়াদি সীমান্ত উত্তেজনা ভারতের মনোযোগ সমুদ্রভিত্তিক কৌশল থেকে সরিয়ে-পশ্চিম সীমান্তে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। ফলে কোয়াড-এর মতো প্ল্যাটফর্মেও ভারতের সক্রিয়তা ব্যাহত হতে পারে। এটি ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকেই বাধাগ্রস্ত করবে।