শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:৫৬, ১০ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা ঘিরে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। গত বুধবার থেকে টানা তিন দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ভারত তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র’ প্রতিহত করা হয়েছে এবং ‘কোনো উড়োজাহাজের’ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
যেসব বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে সেগুলোর একটি হলো রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটি। এটি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
রাতভর ইসলামাবাদ থেকে বেশকিছু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথিদের আসা-যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। ভারতের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর ওই ঘাঁটি থেকে নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এখন শুধু আমাদের জবাবের জন্য অপেক্ষা করুন।’
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দিল্লির ‘উন্মত্ত আচরণ দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে বড় ধরনের সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।’
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে উত্তর থেকে পশ্চিম– বিভিন্ন রাজ্যে সন্দেহভাজন সশস্ত্র ড্রোন দেখা গেছে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে এরকমই একটি ড্রোন হানায় কয়েকজন নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের আকাশসীমা শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সেদেশের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
করাচির গুলিস্তাঁ-এ-জওহার এলাকার এক বাসিন্দা জুবেইর আশরাফ বিবিসিকে জানিয়েছেন, শনিবার ভোরবেলা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তিনি। আকাশে আলোর ঝলকানিও দেখতে পেয়েছেন আশরাফ।
বিস্ফোরণের পরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সবাই তাদের বাড়ির আলো নিভিয়ে দেন। করাচির মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা ডা. ফায়সাল টাকি জানাচ্ছেন, করাচি বিমানবন্দরের দিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্র ও শনিবারের মাঝ রাতে উত্তরের বারামুল্লা থেকে গুজরাতের ভুজ পর্যন্ত ২৬টি জায়গায় ড্রোন দেখা গিয়েছে। এসব সন্দেহভাজন সশস্ত্র ড্রোন বেসামরিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
বারামুল্লা, শ্রীনগর, অবন্তীপোরা, নাগরোটা, জম্মু, ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা, লালগড় জাট্টা, জয়সলমীর, বারমের, ভুজ, কুয়ারবেত এবং লক্ষী নালার কাছে ওই ড্রোনগুলি দেখা গেছে।
ফিরোজপুরের একটি বেসামরিক এলাকায় এমনই একটি ড্রোন হামলা চালায়। ওই হামলায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় তল্লাশী চালাচ্ছে।
ভারত জানিয়েছে, তাদের সামরিক বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং এ জাতীয় সমস্ত হামলা ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোকাবেলা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে থাকার এবং এলাকায় জারি করা সুরক্ষা নির্দেশাবলী মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
শুক্রবার (৯ মে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে।
বুধবার ভারতের প্রথম বিমান হামলার পর শিশুসহ দুই দেশে ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই পাকিস্তানের।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে আসছে ভারত। তবে তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। ওই ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে দেশ দুটি। এমন উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারত। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ