শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:৫২, ১৪ জুন ২০২৫
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানায়, চলমান সংঘাতের শুরুতেই তারা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে প্রথম লক্ষ্য করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ধ্বংস করা হচ্ছে। আইডিএফ মুখপাত্র এফি ডেফরিন দাবি করেছেন, ‘তেহরান পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান কার্যত মুক্তভাবে উড়তে পারছে।’
কিন্তু সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এটাই পারমাণবিক কর্মসূচির মূল সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ভাঙার চাবিকাঠি নয়।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত। যেমন, ফোরদোর জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি ৮০ মিটার গভীরে বলে ধারণা করা হয়। একইভাবে, মাউন্ট কোলাং-এ নির্মাণাধীন নতুন স্থাপনাটি আরও গভীরে ও আরও সুরক্ষিত।
এই ধরনের ঘাঁটি ধ্বংসে প্রয়োজন ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের GBU-57/B বা Massive Ordnance Penetrator (MOP)। যা ৬০ মিটার পর্যন্ত কংক্রিট ভেদ করতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে হামলায় অংশ নিচ্ছে না এবং ইসরায়েলের অস্ত্রাগারে MOP নেই।
ইসরায়েলি অস্ত্রাগারে রয়েছে ROCKS ও Air LORA নামের ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলো ৬ মিটার পর্যন্ত কংক্রিট ভেদ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের RUSI-এর বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, ‘এত গভীর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে হলে বহুবার এক স্থানেই নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে হবে, যাতে ধাপে ধাপে ভিতরে প্রবেশ সম্ভব হয়।’
তবে সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলোন পিঙ্কাস প্রশ্ন তুলেছেন, ইসরায়েলের অস্ত্র মজুদে এত দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের জন্য পর্যাপ্ত সক্ষমতা আদৌ আছে কি না।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রবেশ ও নির্গমন সুড়ঙ্গগুলো লক্ষ্য করে হামলাই হতে পারে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত কৌশল। এর ফলে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কার্যকারিতা সাময়িকভাবে অচল হয়ে পড়তে পারে।
তবে RUSI বলছে, ইরান এই সুড়ঙ্গগুলো খুব দ্রুতই পুনর্গঠন করতে সক্ষম। অতীতে যেমন, বিজ্ঞানীদের হত্যার মাধ্যমে কিছু সময় কর্মসূচি বিলম্বিত করা সম্ভব হয়েছিল, এখনো হয়তো তা সম্ভব। কিন্তু যতদিন ইরানের সরকার ক্ষমতায় আছে, ততদিন এই কর্মসূচি পুনর্গঠন চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্কসহ অনেকে মনে করেন—ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সামরিকভাবে প্রায় অসম্ভব। ইসরায়েলের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে হয়তো সময়ক্ষেপণ সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই কর্মসূচিকে নিশ্চিহ্ন করা খুবই কঠিন।
এমআরএইচ