ঢাকা, রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
দশ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলেছে সরকারি অফিস
Scroll
গোপালগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ৩ বাসের ধাক্কা, এটিএসআইসহ নিহত ২
Scroll
সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ায় যুবদল নেতা বহিষ্কার
Scroll
হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান, তেলের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে
Scroll
সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করতে পারি এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
Scroll
ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও বন্ধ করব: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি
Scroll
গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান
Scroll
ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৭
Scroll
দীর্ঘ ১০৪ বছরের রেকর্ড গুঁড়িয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মহানায়ক টেম্বা বাভুমা

ইরানের শত্রু-মিত্রর তালিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩:৩৪, ১৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ০১:৫৪, ১৫ জুন ২০২৫

ইরানের শত্রু-মিত্রর তালিকা

১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লব ইরানের ইতিহাসে শুধু একটি রাজনৈতিক পালাবদল নয়, দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মানচিত্রও পাল্টে দিয়েছে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়েছে শত্রুতায়, আবার পুরোনো শত্রুরাও কেউ কেউ পরিণত হয়েছে কৌশলগত মিত্রে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, আজকের ইরানের মিত্র-শত্রুর তালিকায় কে কোথায়—

যুক্তরাষ্ট্র: বন্ধু থেকে চরম শত্রু

১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। পরবর্তী ২৬ বছর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পরই সেই সম্পর্ক রূপ নেয় চরম বৈরিতায়। ১৯৮০ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ইসরায়েল: একসময় সহমর্মী, আজ চরম প্রতিদ্বন্দ্বী

রেজা শাহের আমলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিল ইরান। কিন্তু ইসলামিক বিপ্লবের পর খোমেনি একে "শত্রু রাষ্ট্র" হিসেবে ঘোষণা করেন। ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করে আসছে, তেহরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ইরান হামাস ও হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে থাকে—যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালায়।

সৌদি আরব: প্রতিবেশী কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী

মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে সৌদি আরব ও ইরান একে অপরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। দুই দেশের ছায়াযুদ্ধ চলছে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে। ২০১৯ সালে সৌদির তেলক্ষেত্রে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছিল রিয়াদ। যদিও সম্প্রতি চীন-নেতৃত্বাধীন এক উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকের চেষ্টাও চলছে।

রাশিয়া: দখলদার থেকে ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত

সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইরানে প্রবেশ করে, যুদ্ধ শেষে দীর্ঘ সময় দখলদারি বজায় রাখে।
তবে বর্তমানে রাশিয়া ও ইরান কৌশলগতভাবে ঘনিষ্ঠ। সিরিয়া সংকটে একসঙ্গে জড়িত দুই দেশ। রাশিয়া ইরানকে ড্রোন ও অস্ত্র চুক্তিতে পাশে পাচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে মস্কো-তেহরান জোট এখন অনেক শক্তিশালী।

চীন: অর্থনীতি ও অস্ত্রচুক্তিতে শক্তিশালী সঙ্গী

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় চীন ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। বর্তমানে চীন হলো ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন অনেক সময়েই ইরান থেকে তেল আমদানি করে। চীনের কূটনৈতিক ভাষ্য, তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ‘অটুট’ থাকবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন: আলোচনার পক্ষপাতী

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময়ই ছিল আলোচনা-কেন্দ্রিক। ২০১৫ সালের চুক্তি (JCPOA) থেকে ট্রাম্প প্রশাসন বের হয়ে গেলেও, ইইউ দেশগুলো এখনও চুক্তিকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে। ইরানের ওপর ইউরোপ কোনো বড় ধরনের সামরিক চাপ না দিলেও, মানবাধিকার ইস্যুতে তারা মাঝে মাঝে সমালোচনামুখর।

ইরাক: শত্রু থেকে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী

ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-৮৮) ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে ভয়াবহতম। তবে বর্তমানে ইরাকের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকার ও ইরান ঘনিষ্ঠ মিত্র। তেহরান বেশ কয়েকটি ইরাকি মিলিশিয়া গোষ্ঠীকেও সমর্থন দেয়, যারা মাঝে মাঝে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায়।

হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি: আঞ্চলিক মিত্র বাহিনী

হিজবুল্লাহ (লেবানন): ১৯৮০-এর দশকে ইরানের সহায়তায় গঠিত। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সক্রিয়।

হামাস (ফিলিস্তিন): গাজাভিত্তিক ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, ইরানের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পায়।

হুতি (ইয়েমেন): সৌদি-সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে, ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পায়।

ভেনেজুয়েলা: অভিন্ন শত্রু যুক্তরাষ্ট্রে মিল

অবরোধ, অর্থনৈতিক সঙ্কট আর দুই দেশের একই শত্রু, ইরান-ভেনেজুয়েলাকে নিয়ে এসেছে কাছাকাছি। ২০০১ সালে ইরানের মোহাম্মদ খাতামি আর ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক এই সম্পর্কের গোড়াপত্তন। আহমদিনেজাদ ক্ষমতায় আসার পর তা আরো নিবিড় হয়। একক শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে দুইদেশ বেশি কিছু চুক্তিও করেছে।

বাংলাদেশ: বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি ঢাকায় আসেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় সফর বেড়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ এখনো ইরানে টেক্সটাইল ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে যাচ্ছে।

তেহরানের জোট-পরিবর্তনের কৌশল

ইরান তার বিপ্লব-পরবর্তী চার দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘মিত্র’ ও ‘শত্রু’ বেছে নিয়েছে কৌশলগতভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থেকে চীন, রাশিয়া ও কিছু আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে তেহরান তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতিটি সম্পর্কই সময় ও প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনশীল—যার ভেতর দিয়ে ইরান বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে।

এমআরএইচ

আরও পড়ুন