ঢাকা, রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
দশ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলেছে সরকারি অফিস
Scroll
গোপালগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ৩ বাসের ধাক্কা, এটিএসআইসহ নিহত ২
Scroll
সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ায় যুবদল নেতা বহিষ্কার
Scroll
হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান, তেলের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে
Scroll
সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করতে পারি এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
Scroll
ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও বন্ধ করব: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি
Scroll
গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান
Scroll
ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৭
Scroll
দীর্ঘ ১০৪ বছরের রেকর্ড গুঁড়িয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মহানায়ক টেম্বা বাভুমা

গলায় গলায় খাতির থাকা ইসরায়েল-ইরান শত্রু হলো যেভাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩:৫৪, ১৪ জুন ২০২৫

গলায় গলায় খাতির থাকা ইসরায়েল-ইরান শত্রু হলো যেভাবে

গত কয়েক দশক ধরেই ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত। ইরান ইসরায়েলকে "শত্রু রাষ্ট্র" বলে মনে করে, এমনকি দেশটিকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কথা বলেও থাকে। অন্যদিকে, ইসরায়েল ইরানকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করে। তবে এই বৈরিতা কি চিরন্তন? ইতিহাস বলছে—সবসময় এমনটা ছিল না।

যখন বন্ধুত্বের সুর

ইরান-ইসরায়েলের সম্পর্কের শুরুটা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ইরান তাকে স্বীকৃতি দেয়। তখন আরব দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকতে ইরানকে কৌশলগত বন্ধু হিসেবে পায় ইসরায়েল। আর ইরানও ইসরায়েলকে আরবপন্থী শত্রুদের মোকাবিলায় পাশে পায়।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েল ইরানে কৃষি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিত। ইরান তাকে জ্বালানি দিত। ইরানের সেনাবাহিনী গঠনে ইসরায়েলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় ইরান ছিল ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইহুদি অধ্যুষিত রাষ্ট্র।

১৯৭৯: এক বিপ্লবে বদলে গেল সমীকরণ

ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের মাধ্যমে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ধর্মীয় সরকার ক্ষমতায় আসে। বিপ্লবের পরপরই ইসরায়েলের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল করে ইরান। খোমেনি ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেন।

এই সময় থেকেই ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কে বৈরিতার শুরু। একদিকে, ইরান আরব রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন পাওয়ার কৌশল হিসেবে ইসরায়েলবিরোধিতাকে সামনে আনে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব বিস্তারে এই অবস্থান ইরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

হিজবুল্লাহ: প্রতিরোধের ‘প্রক্সি’

১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করলে ইরান সেখানে বিপ্লবী গার্ড পাঠায়। তাদের সহায়তায় গঠিত হয় শিয়া জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহ। বর্তমানে লেবাননে এই গোষ্ঠীকে ইরানের ‘প্রক্সি’ হিসেবে দেখা হয়। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গেও ইরান ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

অবস্থানের সমালোচনা: পরিবর্তনের আভাস?

তবে ইরান সরকারের এই অবস্থানকে সবসময় দেশের জনগণ বা বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন করছেন—তা নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানির কন্যা ফায়েজেহ রাফসানজানি ২০২১ সালে বলেছিলেন, "ইরানের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা। সময় বদলেছে, সম্পর্কও মানানসই নয়।" রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদেগ জিবাকালম ২০২২ সালে বলেন, এই অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানকে একঘরে করে ফেলছে।

ইসরায়েল নিয়ে দ্বিধা: সমর্থন না হতাশা?

ইরানের বর্তমান শাসক আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও পূর্বসূরীর মতোই ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে কঠোর। এমনকি ইরানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘হলোকাস্ট’ অস্বীকারের অভিযোগও রয়েছে।

তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বার্লিনভিত্তিক বিশ্লেষক আলি ফাথেল্লাহ-নেজাদ বলেন, "গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন কিংবা ইরানে ইসরায়েলি হামলার জবাবে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় ইরানের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।"

ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক আজ শত্রুতার কেন্দ্রে থাকলেও অতীতে তারা ছিল কৌশলগত বন্ধু। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বদলে যাওয়া এই সম্পর্ক আবার নতুন দিকে মোড় নেবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এমআরএইচ

আরও পড়ুন