ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

নিজেদের বিভক্তি কিভাবে দূর করবে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২২:৩৬, ২০ জুন ২০২৫

নিজেদের বিভক্তি কিভাবে দূর করবে ইরান

ইরান আজ বহুমুখী চাপের মুখে। বাইরের শক্তিগুলোর চাওয়া—ইসলামিক প্রজাতন্ত্র দুর্বল হোক, আর ভেতরে চাপা অস্থিরতার আগুন। এমন এক সময় চলছে, যখন তেহরানের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র, আর রাস্তায় নীরবতা।

আন্তর্জাতিক স্বার্থে ইরানের দুর্বলতা কাম্য

বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা—ইরান যেন অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল ও অস্থির থাকে। কারণ, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের শক্ত অবস্থান হলে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার অজুহাতে সামরিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তখন সীমিত হয়ে যায়।

বিরোধীরা প্রস্তুত, কিন্তু এখনও নয়

ইরানের ভেতরের বিরোধী দলগুলো মনে করছে, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শাসনের শেষ সময় হয়তো খুব কাছেই। তবে আগের আন্দোলনে যুক্ত অনেকে বলছেন, এখনই রাস্তায় নামা ঠিক নয়। তাদের ভাষায়, "আমরা খামেনির শাসন ঘৃণা করি। কিন্তু যখন আমাদের দেশ বাইরের আগ্রাসনের মুখে, তখন আমরা বিদ্রোহ করব না। যুদ্ধ থামলে আমরা হিসাব চাইব।"

নেতৃত্বহীন বিরোধিতা ও আলাদা বার্তা

ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নির্বাসিত বিরোধীরা নিজেরাই বিভক্ত। কেউ আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন, কেউ আবার সংযমের আহ্বান জানাচ্ছেন। সীমান্তে কুর্দি ও বেলুচি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান কখনো এতটা চাপের মুখে পড়েনি। তবে খামেনির শাসনের পতনের জন্য জনগণভিত্তিক কোনো অভ্যুত্থান ছাড়া কার্যকর পরিবর্তন আসা কঠিন বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

‘এটাই আমাদের সময়’: রেজা পাহলভি

প্রয়াত শাহের পুত্র রেজা পাহলভি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘এই মুহূর্তটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে উৎখাতের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।" তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ ইরানি জনগণের নয়, এটি খামেনি ও তার শাসনের যুদ্ধ।’

ওয়াশিংটন ও তেলআবিবে তার প্রতি সমর্থন রয়েছে, কারণ তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র উৎখাতের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ধর্মঘট ও গণআন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন—যা ইরানের ভেতরে অস্থিরতা উসকে দিতে পারে।

ইসরায়েলও চাইছে শাসন পরিবর্তন

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খোলাখুলিই বলেছেন, ‘আমরা ইরানিদের স্বাধীনতার পথ তৈরি করছি।’ অর্থাৎ, ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে হটানো তাদের যুদ্ধনীতিরই অংশ।

ভীত জনগণ, নিঃশব্দ শহর

ইরানের সামরিক মিত্র বাহিনী বাসিজের এক সদস্য জানিয়েছেন, কোম শহরে তারা 'ইসরায়েলি গুপ্তচর নির্মূল' এবং সরকার রক্ষায় প্রস্তুত। অন্যদিকে, দমন-পীড়নে ক্লান্ত সাধারণ মানুষ বাঁচার পথ খুঁজছে।

প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী ও নোবেলজয়ী নার্গেস মোহাম্মদী এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার শহর ধ্বংস করো না।’—এই বাক্য যেন আজকের ইরানের অসংখ্য নীরব কণ্ঠের প্রতিধ্বনি।

একজন সাবেক বন্দি ও বিরোধী কর্মী আতেনা দায়েমি বলেন, "মানুষ এখন আন্দোলনের কথা ভাবছে না। তারা কেবল নিজেদের পরিবার, প্রতিবেশী এমনকি পোষা প্রাণীদেরও বাঁচাতে চায়।"

শিরাজের এক ছাত্র রয়টার্সকে বলেন, “ইসরায়েলি হামলা শেষ হলে আমরা আওয়াজ তুলব। কারণ, এই যুদ্ধের জন্য এই সরকারই দায়ী।”

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন