শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:২৭, ৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১৬, ৭ মে ২০২৫
এর আগে ২০১৩ সালে দেশে ফিরে নিজ কর্মস্থলে যোগদান না করায় বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস অনুযায়ী তার চাকরির অবসান হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব এ কে এম ফজলুল হক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান গতকালই (মঙ্গলবার) দেশে ফিরেছেন। তিনি সরকারি চাকরি ফিরে পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে। এখন সব প্রক্রিয়া শেষে দু-একদিনের মধ্যে আদেশ জারি করা হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডা. জোবাইদা রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক (এমবিবিএস) সম্পন্ন করে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রি নেন। চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে চলে যান তিনি।
জানা যায়, স্বামীকে সুস্থ করার উদ্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান ২০০৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে। এর আগে একই বছরের ৯ এপ্রিল শিক্ষা ছুটির আবেদন করলে সরকার তাকে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করে। এরপর কয়েক দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্তই তার ছুটি বহাল রাখে সরকার। এরপর আরো দুই দফায় এক বছর করে মোট দুই বছর ছুটি বাড়ানোর আবেদন করলেও সরকার তা নাকচ করে। ফলে সরকারের অনুমোদন ছাড়া একনাগাড়ে ৫ বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার চাকরির অবসান হয়।
প্রথম দফায় ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন ডা. জোবাইদা রহমান। সরকারি চাকরিতে এ ধরনের ছুটির আবেদনকে ‘অসাধারণ ছুটি’ বলা হয়। আর এ ধরনের ছুটি মঞ্জুর করে থাকেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব। তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ন কবীর দুইবারই ডা. জোবাইদার ছুটির আবেদন নাকচ করেন। ছুটির আবেদন নাকচ হলেও রহস্যজনক কারণে দেরিতে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা।
জানা গেছে, প্রথম দফায় স্বাস্থ্য সচিব ছুটির আবেদন নাকচ করেন ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা অফিস আদেশ জারি করে এর একমাস পর ৯ মার্চে। দ্বিতীয় দফায় ছুটির আবেদন নাকচ হয় একই বছরের ১২ জুলাই অথচ অফিস আদেশ জারি হয় ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। আবার এসব অফিস আদেশ জারি করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা যুক্তরাজ্যে ডা. জোবাইদা রহমানের কাছে বা বাংলাদেশে তার স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বা তিনি রিসিভ করেছেন এমন কোনো রেকর্ড সংশ্লিষ্ট শাখায় নেই বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ছুটির আবেদনে নিয়ম অনুযায়ী, এ জাতীয় ছুটির কারণ ও ছুটির আবেদনকারী কর্মকর্তার বিদেশে অবস্থানের ঠিকানা থাকতে হয়। কিন্তু ডা. জোবাইদার আবেদনে এ দুটোর কোনোটিই উল্লেখ ছিল না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ছুটি বিধিমালা অনুযায়ী অসাধারণ ছুটির মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি হতে পারবে না। ছুটি বিধিমালা ৯ (৩) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে যেকোনো ছুটি অনুমোদন করতে পারে। অন্য দিকে ছুটি বিধিমালার অধ্যয়ন ছুটি সংক্রান্ত এফ আর-৮৪ এর নিরীক্ষা নির্দেশনার (গ) তে বলা হয়েছে : ‘এই প্রকার ছুটির মেয়াদ সাধারণভাবে ১২ মাস। তবে বিশেষ কারণে সর্বোচ্চ ২৪ মাস পর্যন্ত এই প্রকার ছুটি মঞ্জুর করা যাইবে। কোর্সের প্রয়োজনে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হইলে আরো ৪ মাস অর্জিত ছুটি এবং ৩২ মাস অসাধারণ ছুটি প্রদান করা যাইবে। অর্থাৎ অধ্যয়নের প্রয়োজনে ৫ বছর ছুটি প্রদান করা যাইতে পারে। ইহার অতিরিক্ত অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে বিএসআর পার্ট-১ এর ৩৪ নং বিধির আওতায় চাকরির অবসান হইবে।
বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস বিধি ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে ‘বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকার ভিন্নরূপ কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে, বাংলাদেশে ফরেন সার্ভিসে কর্মরত থাকার ক্ষেত্র ছাড়া, অন্যত্র ছুটিসহ অথবা ছুটি ছাড়া একাধিক ক্রমে ৫ বছর দায়িত্ব থেকে অনুপস্থিত থাকার পর একজন সরকারি কর্মচারীর চাকরির অবসান ঘটবে।