শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫০, ১০ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ওই আদেশের একটি কপি সিলেটের জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (১০ মে) সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একইসঙ্গে সিলেট বিজিবি (৪৮ ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হকও কারফিউ জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তবর্তী ভারতের জৈন্তিয়া হিলস জেলা প্রশাসন রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটি অনুলিপির মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস, পূর্ব খাসি হিলস ও পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস জেলায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে সেদেশটির প্রশাসন। আমাদের সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছেও তারা সেই আদেশের একটি অনুলিপি পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, এই বিষয়টি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমরাও আমাদের সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করতে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে রাতে সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান না হয়, সে বিষয়েও আমাদের টহল বাড়ানো হয়েছে।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা তাওহীদুল ইসলাম (৪০) বলেন, আমরা যারা বৈধভাবে চলাফেরা করি, তাদের জন্য এটি বড় সমস্যা নয়। তবে যারা অবৈধ কাজ করে, যেমন চোরাচালান বা সীমান্ত অতিক্রম করে, তাদের জন্য এটি কঠিন হবে। আইন মেনে চললে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. সাজু হোসেন বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে অনেকেই ভোরবেলায় মাঠে কাজ করতে যান। এমন অবস্থায় যদি সীমান্তে কারফিউ থাকে, তাহলে তাদের জন্য এটা কিছুটা সমস্যার হতে পারে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী শিবাংশ আরস্থির সই করা আদেশে বলা হয়, ‘পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এখনো সম্পূর্ণভাবে বেড়া দিয়ে ঘেরা নয়। এ কারণে এই অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, চোরাকারবারি ও অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশকারীরা রাতের আঁধারে সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে ৮ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ থাকবে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে এই কারফিউ থাকবে। কারফিউয়ের সময়সীমা প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত।
আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সীমান্ত এলাকা সম্পূর্ণরূপে বেড়াবিহীন হওয়ায় এটি চোরাচালানকারী, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রবেশপথে পরিণত হয়েছে। ফলে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারফিউয়ের আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।’
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘শিলং টাইমস’ও এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, মেঘালয় সরকার ইস্ট খাসি হিলস, ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া হিলস ও ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে। সীমান্তবর্তী এই এলাকাগুলোতে এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এ কারণে চোরাকারবারি, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এই ধরনের অবৈধ তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব কারণে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ