শিরোনাম
ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:২৫, ৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ১০:২৮, ৯ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ঘটনাটি ভোলা সদরের। উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ খাঁ বাজার এলাকার বাদশা চেয়ারম্যান বাড়িতে চীনা ওই যুবকের সঙ্গে বাংলাদেশি মেয়ের বিয়ে হয়। ঘটনার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পরলে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষেরা চীনা জামাইকে এক নজর দেখতে ছুটে আসছেন ওই বাড়িতে।
জানা যায়, ভোলার মো. রনি নামে এক যুবকের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউচ্যাটে পরিচয় হয় ইরিছা চং ওরফে মাওয়েন হুয়া নামে ওই চীনা যুবকের। রনির কাছে বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা শুনে ঘুরতে আসেন তিনি। ঢাকায় ঘোরা শেষে ভোলায় রনিদের বাড়িতে আসেন। কয়েক দিন থাকার পর বন্ধুর বোনকে দেখে তার প্রেমে পড়েন ওই চীনা যুবক। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ধুমধাম করে তাদের।
মো. রনি জানান, ইরিছা চং ওরফে মাওয়েন হুয়া চীনের লুনজু শহরে মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার বাবার নাম মেছউধা। তিনি ওই শহরের শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। প্রায় দুই বছর আগে ইউচ্যাট নামে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ইরিছার। দীর্ঘদিন তিনি তার কাছে বাংলাদেশের বিষয়ে জানতে চান। বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য তুলে ধরেন তিনি। এক সময় ইরিছা বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে আগ্রহী হন। রনি তাকে ঘোরার জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি আরো জানান, গত ১১ এপ্রিল চীন থেকে ঢাকায় আসেন ইরিছা। ঢাকায় কয়েকদিন ঘোরার পরে তাকে তাদের গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ করলে রাজি হন ইরিছাও। পরে তাকে নিয়ে ১৬ এপ্রিল ভোলায় গ্রামের বাড়িতে আসেন।
রনি জানান, তাদের বাড়িতে কয়েক দিন থাকার পর তার ছোট বোন নাবিয়া আক্তারকে ভালো লাগে ইরিছার। নাবিয়াকে বিয়ে করার জন্য পরিবারকে প্রস্তাব দেন। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে গত ৪ মে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় তাদের। আগামী ১৫-২০ দিন পর তার বোনকে নিয়ে চীন ফিরে যাবেন ইরিছা। রনিও সঙ্গে যাবেন বলে জানান।
চীনা যুবক ইরিছা চং ওরফে মাওয়েন হুয়া জানন, তিনি বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছিলেন। পরে বন্ধু রনির সঙ্গে তার গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। তার কাছে গ্রামের পরিবেশ অনেক পছন্দ হয়েছে। এরপর নাবিয়াকে তার ভালো লাগতে শুরু করে। এপর্যায়ে তিনি নাবিয়ার প্রেমে পড়েন। প্রথমে নাবিয়ার পরিবার বিয়েতে রাজি ছিল না। পরে দুই পরিবারই রাজি হয়েছে। এরপর বিয়ে হয়।
ইরিছা বলেন, আমি আশা করছি স্ত্রী নাবিয়াকে সারাজীবন সুখে রাখতে পারবো। যতদিন বাঁচবো নাবিয়াকে নিয়েই বাঁচবো।
নাবিয়া আক্তার বলেন, ইরিছা আমাকে পছন্দের বিষয়ে রনি ভাইয়ের কাছে বলেছেন। পরে রনি ভাই মা-বাবার কাছে বলেন। প্রথমে সবাই রাজি ছিল না। পরে তারা ইরিছার খোঁজ-খবর নেন। ইরিছা কী সত্যি মুসলিম কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হন তারা। এরপর ইরিছার মা-বাবা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আমার পরিবার। একপর্যায়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার পরিবার ইরিছাকে ভালো ছেলে মনে করে বিয়ে দিয়েছে। আমিও খুশি ইরিছাকে বিয়ে করতে পেরে। এই কয়দিনে আমিও নিশ্চিত হয়েছি সে আসলেই একজন ভালো ছেলে।
নাবিয়া জানান, তিনি এইচএসসি পাশ করার পর অনার্সে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন যেহেতু বিদেশি ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাই সুযোগ হলে চীনে গিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাবেন।
নাবিয়ার চাচাতো ভাই মো. জুয়েল ও মো. রায়হান জানান, তারা চীনা দুলাভাই পেয়ে অনেক খুশি। এতদিন অন্যান্য জেলায় বিদেশি জামাইয়ের কথা শুনেছেন। এখন তারাই পেয়েছেন বিদেশি দুলাভাই।
তারা আরো জানান, বোনের বিয়েতে তারা অনেক আনন্দ করেছেন। নাচ-গানও করেছেন। কিন্তু দুলাভাই বাংলা বুঝেন না। এ ছাড়া তাদের বাড়িতে প্রতিদিনই শত শত লোকজন জড়ো হন বিদেশি দুলাভাইকে একনজর দেখতে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ