শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩১, ১৩ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
হঠাৎ করে ছুটিতে গেলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। গত রবিবার (১১ মে) সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাই হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উদ্দেশে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। গুঞ্জন রয়েছে, গত ৯ মে তিনি কক্সবাজার সফরকালে তাকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি তলব করে।
এদিকে রবিবারই পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সৈয়দ মারুফের ঢাকায় অনুপস্থিতির বিষয়টি জানায়। মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছে।
সাধারণত একজন রাষ্ট্রদূত কোনো দেশে দায়িত্ব পালনের সময় ছুটিতে গেলে স্বাগতিক দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। রাষ্ট্রদূত কত দিন ছুটিতে থাকবেন, তার অনুপস্থিতিতে কে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করবেন, সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সৈয়দ মারুফ ১১ মে থেকে ছুটিতে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের বাইরে থাকার সময়টাতে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের উপহাইকমিশনার মুহাম্মদ আসিফ। তখন পাকিস্তান হাইকমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সৈয়দ মারুফ কত দিন ছুটিতে থাকবেন, তা কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি। এরপর পাকিস্তান হাইকমিশন অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায়, দুই সপ্তাহের ছুটিতে থাকবেন সৈয়দ মারুফ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্টের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে গতি আনার বিষয়ে ‘অত্যন্ত সক্রিয়’ ভূমিকায় সৈয়দ মারুফকে দেখা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায়ে তিনি নিয়মিত বৈঠক করে আসছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবসহ বিভিন্ন সফর আয়োজনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। গত নয় মাসে সৈয়দ মারুফ চষে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা। সর্বশেষ তিনি ৯ মে কক্সবাজার সফর করেন। অতি সক্রিয় এই কূটনীতিকের হঠাৎ ছুটিতে যাওয়া নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা জল্পনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
পাকিস্তান হাইকমিশনারের এবার নিজ দেশে যাওয়ার ঘটনাটি স্বাভাবিক নয় বলে গণমাধ্যমকে একটি সূত্র জানায়। ওই সূত্রের মতে, পাকিস্তানের হাইকমিশনার তিনদিনের সফরে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট যোগে (ফ্লাইট নং-বিএস-১৫৯) তিনি রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছান।
বিমানবন্দরের একটি ছবিতে দেখা যায় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহম্মেদ মারুফের সঙ্গে অবস্থান করছেন তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বন্ধু আজহার মাহমুদ ও এক নারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাইকমিশনার সফরে কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত হোটেল সি-পার্লে ওঠেন। সেখানে হাইকমিশনারের সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আজহার মাহমুদ ও ওই নারী। ৯ মে নিজ গাড়ি করে বন্ধু ও সেই নারীসহ ঘুরছিলেন সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ।
একই সূত্র বলছে, তাদের কক্সবাজারে অবস্থান করা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পরেন তারা। তখন তাদের পক্ষ থেকে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন এমনটি জানানো হয়।
সূত্র জানায়, সেই নারী ঢাকার ঝিগাতলায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। সেখানে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদের যাতায়াত রয়েছে। এ ছাড়া সেই নারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে একাধিক ছবি ছিল; যা এখন তার অ্যাকাউন্টে নেই। সেগুলো সেই নারী মুছে ফেলেছেন।
জানা যায়, তাদের সফরটি গোপন রাখতে হাইকমিশনার ও তার বন্ধু এক সঙ্গে টিকিট কেটেছেন এবং সেই নারী আলাদাভাবে টিকিট কেটে ভ্রমণ করেছেন। তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। সেই নারী ২৩ ব্যাচের বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হাফিজা হক শাহ। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগে কর্মরত।
হাফিজা হক শাহ পাকিস্তানের হাইকমিশনার তার পূর্ব পরিচিত বলে স্বীকার করেন এবং কক্সবাজারে হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আমার পূর্ব পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে তার অনুষ্ঠানেও গিয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ করিনি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার কাজিনদের নিয়ে ব্যক্তিগত ভ্রমণে কক্সবাজার গিয়েছি। রাষ্ট্রদূত তার পরিবারের লোকজন নিয়ে গিয়েছেন তার মতো করে। আমরা এক সঙ্গে যাইনি। তবে কক্সবাজার গিয়ে দেখা হয়েছে তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার গিয়ে তার সঙ্গে (পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত) আমার দেখা হয়েছে হোটেল লবিতে। পূর্ব পরিচিত হিসেবে একসঙ্গে আমরা কফি খেয়েছি। তখন আরো অনেকেই ছিলেন। এটি তো বড় কিছু না। একসঙ্গে ঘোরাঘুরির বিষয়টি মিথ্যা।
হাফিজা হক শাহ বলেন, তা ছাড়া আমি আমার মতো করেই শনিবার বিকালের ফ্লাইটে ঢাকায় চলে আসি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কবে গেছেন বা কবে ফিরেছেন, তাও জানি না।
পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কক্সবাজারে যাওয়ার টিকিটে নেই পরিবারের লোকজনের নাম। রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদের নাম। এমনকি ঢাকায় ফেরার টিকিটেও রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম। সেখানে দেখা যায় তাদেরও ঢাকায় ফেরত আসার কথা ছিল শনিবার।
একটি সূত্র বলছে, হাইকমিশনারের ভ্রমণ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ হলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষতে অবহত করলে বিষয়টি পাকিস্তান সরকার পর্যন্ত পৌঁছায়। পরে তাকে জরুরি বাই রুটে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দিলে হাইকমিশনার তার সফরসঙ্গী সেই নারী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদকে কক্সবাজার ফেলে ঢাকায় ফেরেন। পরে নিজ দেশে চলে যান।
সৈয়দ মারুফ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ