শিরোনাম
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:২৭, ৩ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা গ্রামের উজানপাড়ার বাসিন্দা সাদেক আলী প্রামাণিক। ভাঙা পায়ে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটেন তিনি। ১৯৭৪ সালে এসএসসি ও ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। বিয়ে করে এক ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা হন।
‘গ্র্যাজুয়েট’ হওয়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল সাদেক আলীর। বৃদ্ধ বয়সেও সেই ইচ্ছা ত্যাগ করেননি। তাই ভর্তি হয়েছিলেন স্নাতকে। গত সোমবার প্রকাশিত হওয়া ফলে দেখা যায়, সিজিপিএ দুই দশমিক ৭৫ পেয়ে স্নাতকে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
এই বয়সে স্নাতক পাস করায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ইচ্ছা পূরণ হওয়ায় তিনি তো খুশি, পাশাপাশি গ্রামের মানুষও আনন্দিত। স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে গ্রামজুড়ে চলে মিষ্টি বিতরণ।
সাদেক আলী ২০২০ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নাটোরের দিঘাপতিয়া এম কে ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে (বিএ) ভর্তি হন। সাদেক আলীর একমাত্র ছেলে নাসির উদ্দিন একই কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক। বড় মেয়ে সাহিদা খাতুন ও ছোট মেয়ে ছাবিনা ইয়াসমিন। তারা দুজনই কামিল পাস। দুই মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে সংসারি হয়েছেন।
সাদেক আলী বলেন, অভাব–অনটনের কারণে পড়ালেখার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি; কিন্তু গ্র্যাজুয়েট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ছেলে–মেয়েরা পড়ালেখা শেষ করে সংসারি হয়েছে। এতে আমার ব্যস্ততাও কমে আসে। তখন আমি বিএ ক্লাসে ভর্তি হিই। তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায়। তবু পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকিনি। ক্রাচে ভর করে পরীক্ষার হলে গেছি।
সাদেক আলী আরো বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমি গ্র্যাজুয়েট হতে পেরেছি। এ আনন্দ শুধু আমার একার নয়, আমার সন্তানেরাও খুশি হয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশীরা খুশি হয়ে মিষ্টিমুখ করেছেন। অনেকে আমার পাস করার কথা শুনে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এর চেয়ে খুশির আর কী আছে?
সাদেক আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন বলেন, আমার বাবা এ বয়সেও একবার পড়েই মুখস্থ করতে পারেন। সংসারের ঝামেলার পাশাপাশি তিনি পড়ালেখা করে স্নাতক হয়েছেন। এতে আমরা ভীষণ খুশি।
সাদেক আলীর এই অর্জন প্রসঙ্গে নলডাঙ্গা উপজেলার কলেজশিক্ষক জিয়াউল হক বলেন, ৭৫ বছর বয়সে একজন মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা করাই কঠিন। অথচ তিনি এ বয়সে পড়ালেখা করে ভালোভাবে পাস করেছেন। এটা সত্যিই দারুণ ঘটনা।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটোর উপ–আঞ্চলিক পরিচালক তানিয়া তালুকদার বলেন, অদম্য ইচ্ছা ও অক্লান্ত পরিশ্রমই সাদেক আলীকে সাফল্য এনে দিয়েছে। শিক্ষার জন্য যে বয়স কোনো সমস্যা নয়, তা তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তার সাফল্যে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও গর্বিত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ