‘জীবনে যা কিছু হয়েছে, তা নিয়ে আক্ষেপ করি না’

২০২২ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক টেলিভিশন ও ইউটিউব স্ক্রিনে আটকে ছিলেন এক রোমাঞ্চকর বিচার নাটকের জন্য। সেটি কোনো চলচ্চিত্র বা সিরিজ নয়, বরং বাস্তব জীবনের আদালত কক্ষে ঘটে যাওয়া একটি মামলা— জনি ডেপ বনাম অ্যাম্বার হার্ড। সাবেক এই তারকা দম্পতির মধ্যে চলে আলোচিত মানহানি ও গার্হস্থ্য সহিংসতার অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ শুনানি, যা হয়ে ওঠে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে।

এই মামলা ও তার ধারাবাহিকতা নিয়েই তিন বছর পর প্রথমবার মুখ খুললেন অভিনেতা জনি ডেপ। সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানডে টাইমস-কে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ডেপ বলেন, নিজের সম্মান, সন্তানদের ভবিষ্যৎ এবং সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকেই তিনি নীরব থাকেননি, বরং শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন।

মূল ঘটনা ২০১৬ সালে শুরু। সেবার অ্যাম্বার হার্ড অভিযোগ তোলেন, তিনি তার স্বামী জনি ডেপের হাতে গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সেই অভিযোগের জেরে ২০১৮ সালে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য সান–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হার্ড আবারো জনির বিরুদ্ধে একই দাবি করেন। এরপর মানহানির অভিযোগে মামলা করেন জনি ডেপ।

২০২০ সালে সেই মামলার রায়ে আদালত জনির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে সত্য বলে রায় দেন। এই রায়ের প্রেক্ষিতে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস থেকে বাদ পড়েন তিনি; তার বদলে গ্রিন্ডেলওয়াল্ড চরিত্রে অভিনয় করেন ম্যাডস মিকেলসেন।

তবে জনি ডেপ থেমে যাননি। ২০২২ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট–এ প্রকাশিত অ্যাম্বার হার্ডের একটি মতামত কলাম নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়, যেখানে হার্ড নিজেকে ‘গার্হস্থ্য সহিংসতার প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডেপ ফের মামলা করেন হার্ডের বিরুদ্ধে। এই মামলার শুনানি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলে টানা কয়েক সপ্তাহ এবং তা ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। বিচারকক্ষের প্রতিটি মুহূর্ত দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়, যা সমাজজুড়ে জনমত গঠন করে জনির পক্ষে।

দ্য সানডে টাইমস–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেপ বলেন, ‘অনেকেই বলছিল, চুপ থাকো, সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানতাম, তা হবে না। যদি আমি চুপ থাকি, তাহলে সবাই ধরে নেবে আমি সত্যিই ওইসব করেছি। এটি আমার সন্তানেরাও শুনবে, জানবে। আমি সেটি হতে দিতে পারি না। আমার সন্তানদের আমার সম্মানহানির বোঝা নিয়ে চলার অধিকার নেই।’

ডেপ আরো বলেন, ‘আমি ভয় পাইনি। নেতিবাচক প্রচার, অসত্য খবর, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার—সব সহ্য করেছি। তবু পিছু হটিনি। আমি জানতাম, সত্যের জন্য আমাকে লড়তেই হবে। যদি শেষ পর্যন্ত পেট্রল পাম্পেও কাজ করতে হয়, তাহলেও আমি মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। আগে করেছি, প্রয়োজনে আবার করব।’

এই মামলার রায়ে বড় ধরনের জয় পান ডেপ। আদালত রায় দেন, হার্ডের আনা অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি জনিকে মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব করেছেন। আদালত হার্ডকে জনি ডেপকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের নির্দেশ দেন।

এখন, সেই ঝড় পেরিয়ে জনি ডেপ আবারো ফিরছেন সিনেমার পর্দায়। ২০২৬ সালে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার নতুন চলচ্চিত্র ‘ডে ড্রিংকার’, যেখানে তার সঙ্গে অভিনয় করবেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী পেনেলোপি ক্রুজ। ব্যক্তিগত জীবনের দুঃসময় কাটিয়ে আবারো আলোচনায় আসছেন ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ তারকা।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘জীবনে যা কিছু হয়েছে, আমি তা নিয়ে আক্ষেপ করি না। কারণ তা-ই আমাকে গড়ে তুলেছে। হারিয়েছি অনেক কিছু, কিন্তু ফিরে পেয়েছি নিজের আত্মবিশ্বাস ও শক্তি। তাই এখন যখন ফিরছি, তা যেন আরো পরিণত একজন জনি ডেপ।’