শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৫৭, ৮ মে ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। বিবিসির সর্বশেষ তথ্য, ভারতের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে পাকিস্তান।
গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন; যাদের বেশির ভাগই পর্যটক। ওই ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের হাত ছিল দাবি করে জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দেয়।
এ নিয়ে অব্যাহত উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের ছয় শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। নয়টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে ভারতের সেনাবাহিনী।
তবে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ বাঁধ লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ভারতের তিনটি রাফালসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
ভারতের ঊর্ধ্বতন একটি সামরিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিজ ভূখণ্ডে তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কয়েকটি সেনাচৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান।
রাতে ভারতের হামলার পর বুধবার (৭ মে) সকালে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরে বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শাহবাজ শরিফ বলেন, ভারতকে বিমান হামলার পরিণতি ভোগ করতে হবে। তারা ভেবেছিল, পাকিস্তান পিছু হটবে, কিন্তু তারা ভুলে গেছে, আমরা বীরের জাতি, আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়তে প্রস্তুত।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও চলছিল। এ প্রচেষ্টার মধ্যে ভারতে পাকিস্তানে হামলা করে বসে। ভারত তার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পাশাপাশি ভারত এ হামলায় ড্রোনও ব্যবহার করেছে।
হামলার বিষয়ে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পেহেলগামের হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তের ওপার থেকে আরো সম্ভাব্য হামলা ঠেকানোর পাশাপাশি ‘সন্ত্রাসবাদী’ কাঠামো ধ্বংস করাই ছিল এ অভিযানের উদ্দেশ্য।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তারা দাবি করেন, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে শুরু করে রাত দেড়টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখা ও সীমান্তের ওপাশে ভারতীয় বাহিনী হামলা চালিয়ে মোট নয়টি ‘সন্ত্রাসী শিবির’ ধ্বংস করেছে।
পাকিস্তান আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, নিজেদের আকাশসীমায় থেকেই দুই দেশের যুদ্ধবিমানগুলো পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। এ সময় তিনটি রাফালসহ ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয় বলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও আইএসপিআর পরিচালক দাবি করেন। বাকি দুটি যুদ্ধবিমান হলো রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও মিগ-২৯। এ ছাড়া একটি সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করা হয় বলে আইএসপিআরের বরাত দিয়ে জিও নিউজ জানায়। পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, হামলায় ভারতের ৮০টি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত ১২ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। গোলার আঘাতে ভারতীয় এক সেনাও নিহত হয়েছেন বলে দ্য হিন্দু জানিয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ