শিরোনাম
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫:২৯, ২ আগস্ট ২০২৫
ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
শুক্রবার (০১ আগষ্ট) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজবাড়ীর পাবলিক হেলথ থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত পুরো সড়কের বেহাল দশা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের কারণে পানি জমে রয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে সড়ক। এ সড়কটি একটি গুরুত্বপুর্ণ সড়ক হলেও সংস্কারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। জেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে হাটুপানি জমে গেছে। ওই এলাকার লোকজনদেরকে চলাচল করতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌরসভার সজ্জনকান্দা এলাকার পাবলিক হেলথ মোড় থেকে হাসপাতাল রোড হয়ে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কটি ১ হাজার ৬৭৫ মিটার। প্রধান সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন ও মাল বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধ করায় হাসপাতাল সড়ক দিয়ে ট্রাক ও ভারি মালবাহী গাড়ী চলাচল করে। সড়কটির ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন ও মালবোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, বালুর ট্রাক চলাচল করায় বিভিন্ন জায়গা খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, মসজিদ, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। দীর্ঘদিন সড়কের পাশের ড্রেনও সংস্কার হয় না। ফলে ময়লা আবর্জনায় ড্রেনগুলো প্রায় বন্ধ। বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়ে সড়কে জালাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সপ্তাহ ধরেই রাজবাড়ীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে পাবলিক হেলথ মসজিদের সামনে থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়াও রাজবাড়ী রেলগেট-উড়াকান্দা বেড়িবাঁধ রুটে প্রতিদিন কয়েক হাজার অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। রেলগেট থেকে নুরপুর পর্যন্ত সড়কের খুবই বেহাল অবস্থা। রেলগেট থেকে হরিজন পল্লী হয়ে নূরপুর পর্যন্ত পুরো সড়কই ভাঙাচোরা। বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে কোথাও খোয়া, কোথাও মাটি বেরিয়ে গেছে। আবার কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতাল রোড, উড়াকান্দা সড়ক ছাড়াও পৌরসভার ড্রাইস ফ্যাক্টরি রোড, গোদারবাজার রোড, টেকনিক্যাল থেকে শ্রীপুর বাজার রোড, দক্ষিণ ভবানীপুর রোড, ধুঞ্চি রোডসহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি সড়কেরই বেহাল দশা।
রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোড সহ আরো কয়েকটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সদর হাসপাতাল রোড ১৬৭৫ মিটার, পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত ২১২০ মিটার এবং ২ নম্বর রেলগেট থেকে এতিমখানা রোড সংস্কারের জন্য ওয়ান ব্যাংকের প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি এ মাসের মধ্যে অনুমোদন হয়ে টেন্ডার আহ্বান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন, সেগুনবাগিচা সড়কের উপর প্রায় হাটুপানি জমে গেছে। এ সড়ক দিয়ে গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ সড়কে বসবাসরত বাসিন্ধাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতাল রোডের এ সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ সড়ক দিয়ে মালবাহী ট্রাক, বালুর ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এ রাস্তা দিয়ে সামনে আগালেই হাসপাতাল। রাস্তার এমন বেহাল দশার কারণে রোগীদের যেতে কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যেই গাড়ি উল্টে যায়। রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এখানে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া দরকার।
মোটরসাইকেল আরোহী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এ রাস্তার বেহাল অবস্থা, পথচারীসহ যারা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের এ রাস্তার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
সুবর্ণা ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি এমন দেখছি। রাস্তার পাশে পানির লাইন লিকেজ ও ড্রেন থেকে পানি বের হবার কারণে সবসময় পানি থাকে। বড় বড় ট্রাক যাওয়ার কারণে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। প্রতি বছর টুকটাক সংস্কার করা হলেও এবার কিছুই করা হয়নি। আমরা দ্রুত এর সংস্কার দাবি করছি।
রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ খান বলেন, পুরো দেশের মতো রাজবাড়ীতেও বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে হাসপাতাল রোডসহ পৌর এলাকায় কয়েকটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোড ও পান্নাচত্তর থেকে তালতলা রোড এ তিনটি রোডের সমন্বয়ে একটি আরইউটিডিপি প্রকল্প থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে প্রকল্পটি। প্রকল্পের অনুমোদন হলে এই মাসের মধ্যেই টেন্ডার আহ্বান করবো আমরা।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরই বৃষ্টির সময় এ রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই আমরা টিএসসি মোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উঁচু করেছি। অতিবৃষ্টির কারণে পুরো রাস্তা নষ্ট হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও গর্ত তৈরি হয়েছে। এ রাস্তা সংস্কারের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরপরেও রাস্তাটি আরসিসি দিয়ে উন্নয়ন করার বিষয়টি হাতে নিয়েছি। এতে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। হাসপাতাল রোডের সঙ্গে এতিমখানা রোড এবং পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত একই প্যাকেজে আরসিসি ড্রিলসহ রাস্তা নতুনভাবে নির্মাণ করার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দ্রুতই জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে