ঢাকা, শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ সফর ১৪৪৭

বিচারহীনতায় শার্শা-বেনাপোলে ১৫ বছরে ৭৯ ধর্ষণ মামলা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮:১২, ৮ আগস্ট ২০২৫

বিচারহীনতায় শার্শা-বেনাপোলে ১৫ বছরে ৭৯ ধর্ষণ মামলা

ছবি: ঢকা এক্সপ্রেস

বিচারহীনতার কারনে গত ১৫ বছরে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা যশোরের শার্শা উপজেলাতে ৭৯ জন নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ সময় ঘটনা আড়াল করতে ধর্ষণ ও বলাৎকারের শিকার ৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ৭৯টি ধর্ষণ মামলায় অন্তত আসামী হয়েছেন শতাধিক। তবে সাক্ষীর অভাব আর দুর্বল তদন্ত রিপোর্টে প্রায় সব আসামী জামিনে খালাস পেয়েছেন। এতে বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করে নতুন করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগী অনেক পরিবার। তবে পুলিশ বলছে নারী নির্যাতন রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন। আর মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের মত ঘটনা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শার্শা উপজেলায় ৭৯ টি ধর্ষণ মামলার মধ্যে, শার্শা উপজেলাধীন শার্শা থানায় ৪৮ টি ও বেনাপোল পোর্ট থানায় ৩১ টি মামলা দায়ের হয়।

ধর্ষনের পর হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনার মধ্যে আলোচিত ছিল, ২০১০ সালে বেনাপোলের গয়ড়া গ্রামের চৌকিদার নবিচ্ছদির মেয়ে কাজল রেখা ধর্ষণের পর হত্যা। অভিযোগ ওঠে সম্পতির বিরোধ নিয়ে রেশারেশিতে প্রতিবেশি শওকতের ছেলে অহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগী মিয়াদ আলী কাজল রেখাকে গণধর্ষণ করেন। পরে ঘটনা ধামা চাপা দিতে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মরদেহ মাঠে ফেলে দেওয়া হয়। ন্যায় বিচার পেতে কাজল রেখার পিতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তবে কয়েকদিন বাদেই ধর্ষণকারীরা জীবন নাশের হুমকি দেওয়ায় অসহায় বাবা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়। মেয়ে হারানোর শোকে ঘটনার পর থেকে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বাবা-মা। এখন বিচার চান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে।

কাজল রেখার বাবা নবিচ্ছদি জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার পায়নি। মামলা করলেও প্রভাবশালীদের চাপে মামলা তুলে নিতে হয়েছিল। বর্তমান সরকারের কাছে মেয়ে হত্যা ও ধর্ষণের বিচার চাই।

কাজল রেখার প্রতিবেশিরা জানান, ওহিদুল ও তার সহযোগীরা ছিল দস্যু প্রকৃতির। প্রভাবশালীদের হয়ে অসহায় মানুষদের সম্পদ দখল করে দেওয়া তাদের কাজ ছিল। কেউ তাদের কাজে বাঁধা প্রদান করলে লুটপাট, ধর্ষণ ও হত্যার মত ঘটনা ঘটাতে পিছু হটতো না।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ মে উপজেলার বসতপুর গ্রামের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী সেলিনা খাতুনকে প্রতিবেশি জাকির ও তার চার বন্ধু গণ ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করেন। পরে লাশ বস্তায় ভরে খালে ফেলে দেন। এ ঘটনায় আসামীরা গ্রেপ্তার হলেও কয়েক মাসের মাথায় তারা জামিনে বের হয়ে আসেন।

২০১৯ সালের ১২ জুন বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে শাহপরানকে বলাৎকার করে মাদরাসা শিক্ষক হাফিজুর রহমান। পরে তাকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় তখন তিনি গ্রেফতার হলেও ফিরেছে জামিনে। একদিকে স্বজন হারানোর ব্যাথা অন্যদিকে এসব অপরাধীরা ফিরে এসে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো আরো ব্যথিত করছে স্বজনদের। শাহপরানের বাবা জানান, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরনের আগেই লালশার শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে সন্তানকে । টাকা দিতে পারেনি বলে বিচার আমাদের পক্ষে আসেনি।

আর ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই শার্শার স্বরূপদাহ গ্রামের কোরবান আলীর মেয়ে মাদরাসা ছাত্রী আর্জিনা খাতুনকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছিল।

মানবাধীকার সংস্থা রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল জানান, বিচারহীনতার কারনে দেশে হত্যা-ধর্ষণের মত ঘটনা বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, প্রভাবশারীদের হস্তক্ষেপের কারনে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এ অবস্থার অবসান হলে সমাজে অপরাধ কর্মকাণ্ড কমবে।

শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির জানান, বিগত সরকারের আমলে বিএনপি পরিবার সহ সাধারন মানুষ যারা হত্যা ও ধর্ষণ সহ বিভিন্নভাবে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের আইনী সহয়তা দিতে সব সময় পাশে থাকবে তার দল।।

যশোর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দীকি জানান, ভুক্তভোগী পরিবার যে কোন সময় আইনী সহয়তা নিতে পারে। মালরার পর পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে ধর্ষণের মত ঘটনা এড়াতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামুলক কাজও করে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন