ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

জুলাই ফাউন্ডেশনে ‘আর্থিক সহায়তা’র নামে কী হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩:১৯, ২০ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৪৫, ২০ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই ফাউন্ডেশনে ‘আর্থিক সহায়তা’র নামে কী হচ্ছে

হিরণ, লিটন ও ফটোশপে আহত প্রমাণ করতে চাওয়া নয়ন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে আহত হননি মো. ইলিয়াছ হোসেন হিরণ (৩৭)। কিন্তু তিনি ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন। একইভাবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন ইলিয়াছ। তবে বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি ১৫ এপ্রিল ফাউন্ডেশনের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেদিন ইলিয়াছ ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দুই লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ১৫ এপ্রিল ইলিয়াছ যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাতে বলেছেন, তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হননি। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হিসেবে সরকারি তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আর আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধারা আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি (‘ক্যাটাগরি এ’ ও ‘ক্যাটাগরি বি’) অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম তোলার আগে তা যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সরকার গঠিত গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল।

ইলিয়াছের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সরকারের তালিকা অনুযায়ী, তিনি ‘ক্যাটাগরি এ’-এর একজন ‘জুলাই যোদ্ধা’।

প্রতারণার অভিযোগে ১৬ এপ্রিল রাজধানীর রমনা মডেল থানায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রধান গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। দুজন হলেন ইলিয়াছ ও মোহাম্মদ লিটন। প্রতারণার অভিযোগে করা বিভিন্ন মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ আসামির মধ্যে ১০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বর্তমানে দুজন কারাগারে, অন্যরা জামিনে আছেন।

ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিয়াছ ও লিটন প্রতারণা করেছেন। তাঁরা ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন। ইলিয়াছ ধরা পড়লে মুচলেকা দেন, তবে লিটন মুচলেকা দেননি। তিনি একবার বলেছেন, রাজু ভাস্কর্যের সামনে আন্দোলনে আহত হয়েছেন। আবার বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হলের সামনে আহত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর এসব কথার সত্যতা পায়নি ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনে আটক থাকা অবস্থায় ১৫ এপ্রিল লিটন ফেসবুকে লাইভে গিয়েছিলেন। তখন তিনি অভিযোগ করেন, ফাউন্ডেশনে কর্মরত ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে ইলিয়াছ জানান, একটি ফেসবুক গ্রুপে লিটনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মারধর করে ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকেও মুচলেকা নিয়েছে ফাউন্ডেশন।

তবে ফাউন্ডেশনের প্রধান গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান এই অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন। এজাহারে লিটনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করা হয়, তিনি বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের উসকানি দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের গিয়ে ভাঙচুর করেছেন। ফাউন্ডেশনে গিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন।

ফাউন্ডেশনের করা মামলায় ১৭ এপ্রিল লিটনের জামিন নামঞ্জুর হয়। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হন। তাঁরা ফাউন্ডেশনের আইন কর্মকর্তা ফাতেমা আফরিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেন। ফাতেমা প্রতিবাদ করলে লোকজন জড়ো হন। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চলে যান।

প্রতারণার অভিযোগে ১০ এপ্রিল রমনা মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন ফাউন্ডেশনের আইন কর্মকর্তা ফাতেমা আফরিন। এই মামলায় ১২ এপ্রিল আসামি দিলশাদ আফরিনের জামিন নামঞ্জুর হয়। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। দিলশাদ জাতীয় নাগরিক কমিটির নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁকে ৮ এপ্রিল জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আরও পড়ুন