ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকে গুরুত্ব পেল যেসব বিষয়

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে দুই পক্ষের প্রতিনিধি সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নির্বাচন আয়োজন, বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

রমজানের আগেই নির্বাচন, তবে অগ্রগতি লাগবে

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও একই মত পোষণ করেন বলে জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জানান, তিনি এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সে সময়ের মধ্যে বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন অপরিহার্য। এই অবস্থানকে স্বাগত জানান তারেক রহমান এবং ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য একে অপরকে ধন্যবাদ জানান উভয় পক্ষ।

সংস্কার ও 'জুলাই সনদ' নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত

সংবাদ সম্মেলনে একাধিকবার সংস্কার ও 'জুলাই সনদ' নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে আমীর খসরু বলেন, এসব বিষয়ে দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এবং স্বাক্ষরও হবে। তিনি জানান, আলোচনা চলমান রয়েছে এবং শিগগিরই একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি যদি সময়মতো নিশ্চিত হয়, তাহলে নির্বাচন রমজানের আগেই আয়োজন সম্ভব।

তারেকের ফেরা, এনসিপি ও ‘নতুন বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গ

এক সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন। জবাবে আমীর খসরু বলেন, “এই বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। তিনি যখনই ইচ্ছা, দেশে ফিরতে পারবেন।”

নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে—এ বিষয়ে আলোচনার প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, “এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, তবে আমরা সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই।”

সংবাদ সম্মেলনে উভয় প্রতিনিধি “নতুন বাংলাদেশ গড়ার” ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও সংস্কার অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।

‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট’—দুই পক্ষের শেষ বক্তব্য

সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা কি সন্তুষ্ট?’ এই প্রশ্নের উত্তর সমস্বরে দেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ। দুজনই বলেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট’। এর সঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো বলছি নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’