ঢাকা, রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
দশ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলেছে সরকারি অফিস
Scroll
গোপালগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ৩ বাসের ধাক্কা, এটিএসআইসহ নিহত ২
Scroll
সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ায় যুবদল নেতা বহিষ্কার
Scroll
হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান, তেলের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে
Scroll
সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি করতে পারি এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
Scroll
ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও বন্ধ করব: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি
Scroll
গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান
Scroll
ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৭
Scroll
দীর্ঘ ১০৪ বছরের রেকর্ড গুঁড়িয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মহানায়ক টেম্বা বাভুমা

ছুটির শেষদিনে ঢাকামুখী মানুষের ঢল, সড়ক-রেল-লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০:৪২, ১৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২১:২৭, ১৪ জুন ২০২৫

ছুটির শেষদিনে ঢাকামুখী মানুষের ঢল, সড়ক-রেল-লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়

ছবি: সংগৃহীত

দশ দিনের দীর্ঘ ঈদুল আযহার ছুটি শেষে আজ শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীমুখী মানুষের ঢল নামে। ছুটি শেষে আগামীকাল থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, আদালতসহ সবধরনের প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার কথা থাকায় আজই ফিরছেন অধিকাংশ মানুষ। ফলে রাজধানীর প্রবেশমুখে রাস্তাঘাট, বাস-ট্রেন-লঞ্চ টার্মিনালজুড়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল অব্যাহত ছিল। ফেরার এই যাত্রা ছিল দীর্ঘ, কষ্টসাধ্য এবং অনেক ক্ষেত্রেই জটিল।

ঢাকার প্রবেশপথে সকাল থেকেই শুরু হয় যাত্রীদের ঢল। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বাস থেকে নেমে মানুষ ছুটে চলেছে নিজ নিজ গন্তব্যে। ঈদের আগে যেভাবে মানুষ পরিবারসহ গ্রামে ছুটেছিল, এখন ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। সব দিক থেকে ঢাকায় ফিরছে মানুষ, যার ফলে বাস কাউন্টারগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ লাইনের। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্ক্ষিত বাস বা টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে সায়েদাবাদ টার্মিনালে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কাউন্টারগুলোর সামনে যাত্রীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে পরিবহন কর্মীদের।

রেলস্টেশনগুলোর চিত্রও আলাদা কিছু ছিল না। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকেই যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টেশনের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ছিল গাদাগাদি ভিড়। যাত্রীরা জানান, বেশিরভাগ ট্রেন সময়মতো ছাড়লেও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে অনেকেই সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যারা আগেভাগে টিকিট কাটতে পারেননি, তারা হয় স্ট্যান্ডিং প্যাসেঞ্জার হিসেবে ট্রেনে উঠে পড়েছেন, নয়তো রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন পরবর্তী ট্রেনের জন্য। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছিল, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে ফিরতে পারেন। তবে চাহিদার তুলনায় ট্রেন সংখ্যা ও কামরার পরিমাণ যথেষ্ট ছিল না বলে মনে করেন অনেক যাত্রী।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যারা লঞ্চে ঢাকায় ফিরছেন, তাদের চাপও বেড়েছে সদরঘাটে। শনিবার সকাল থেকেই সদরঘাট টার্মিনালে ছিল উপচে পড়া যাত্রীদের ভিড়। পদ্মার এপার থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা জানালেন, ভিড়ের মধ্যে অনেকে গাদাগাদি করে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে এসেছেন। ঈদের ছুটি শেষে এমন ভিড় খুব স্বাভাবিক হলেও, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের আরও প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন অনেকে। ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ফিরতি ভিড় সামাল দিতে বিশেষ টিম মাঠে ছিল এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হয়েছে।

সড়কপথে ঢাকামুখী মানুষের জন্য যানজট ছিল আরেক বিড়ম্বনা। মহাসড়কগুলোতে ছিল ধীরগতির যান চলাচল, বিশেষ করে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছু পয়েন্টে যানজটের খবর পাওয়া গেছে। গাজীপুরের চন্দ্রা, ভোগড়া, কোনাবাড়ি এবং মাওয়ার লৌহজং ও শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় কিছু সময়ের জন্য যানজট হয়। অনেক যাত্রী জানান, বাসে করে ৪-৫ ঘণ্টার পথ ৮-৯ ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয়েছে। এর পাশাপাশি অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন কিছু বাস-চালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু পরিবহন সংস্থার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

ঢাকার প্রবেশপথে এই চাপের কারণে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও প্রভাব পড়ে। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, মালিবাগ, উত্তরা ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং রাইড শেয়ারিংয়ের ওপর ভর করে শহরে প্রবেশ করা যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তবে একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমন সামাল দেওয়া ছিল অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং।

সব মিলিয়ে ঈদের পরদিন থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ফিরেছে লক্ষাধিক মানুষ। আজ ছুটির শেষদিন হওয়ায় ঢাকামুখী মানুষের চাপ ছিল সর্বোচ্চ। আগামীকাল রোববার (১৫ জুন) থেকে পুরোদমে অফিস-আদালত শুরু হয়ে গেলে ঢাকার রাস্তায় ফের চিরচেনা ব্যস্ততা ফিরে আসবে। তবে ঈদের এই ফিরতি যাত্রায় মানুষ যেমন ভিড় ও যানজটের ভোগান্তি পোহাচ্ছে, তেমনি নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারায় স্বস্তিও প্রকাশ করছেন অনেকে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিল—ফেরার যাত্রায় যাত্রী চাপ থাকবে এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে, যদিও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

এই ঈদ শেষে মানুষের ঢাকায় ফিরে আসার চিত্রটি একদিকে যেমন আমাদের ঈদ উদযাপনের সামাজিক দিকটিকে সামনে আনে, তেমনি প্রমাণ করে, রাজধানীকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থা কতটা নির্ভরশীল এবং কেন্দ্রীভূত। ঈদের ছুটি শেষ হলেও এ ফিরতি ভিড়ের রেশ আরও অন্তত এক-দুই দিন থাকবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ

আরও পড়ুন