ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

‘তোমাকে মারব না, যাও মোদিকে গিয়ে জানাও’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:১৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১১:৩৪, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

‘তোমাকে মারব না, যাও মোদিকে গিয়ে জানাও’

বন্দুকধারীদের হামলায় স্বামী মঞ্জুনাথকে হারান পল্লবী

কাশ্মীরের পেহেলগামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়েছিলেন কর্ণাটকের শিবমোগা থেকে আসা মঞ্জুনাথ, তার স্ত্রী পল্লবী ও ১৮ বছর বয়সী ছেলে অভিজয়। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটানোর আশায় গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু ফিরলেন বিভীষিকাময় এক স্মৃতি নিয়ে—যেখানে আনন্দের জায়গা দখল করে নিয়েছে শোক আর রক্ত।

পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় স্বামী মঞ্জুনাথকে হারান পল্লবী। বন্দুকধারীরা তার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনার মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল বিকেলে সেই পর্যটনকেন্দ্র যখন ব্যস্ত ছিল প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনায়, ঠিক তখনই আচমকা বন্দুকধারীদের বর্বর হামলায় কেঁপে ওঠে পেহেলগাম। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় মৃত্যু মিছিল। এই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন, যার মধ্যে ছিলেন পল্লবীর স্বামী, মঞ্জুনাথও।

পল্লবী বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করলাম যে তিন থেকে চারজন বন্দুকধারী সেখানে ছিল। আমার স্বামীকে মারার পর আমি একজন বন্দুকধারীর মুখোমুখি হয়ে বললাম, মেরে পতি কো মারা হ্যায় না, মুঝে ভি মারো' (তুমি আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছ, আমাকেও মেরে ফেলো)। 

বন্দুকধারী উত্তর দিয়েছিল, ‘নাহি মারেঙ্গে, তুম মোদি কো জাকে বোলো (আমি তোমাকে মারব না, তুমি মোদিকে গিয়ে হামলার কথা জানাবে)।’ 

তিনি বলেন, “সকাল থেকে আমার ছেলে কিছু খায়নি। তাই মঞ্জুনাথ আমাদের জন্য রুটি আনতে গিয়েছিলেন। তখনই আমরা প্রথমে গুলির শব্দ শুনি। শুরুতে ভেবেছিলাম সেনাবাহিনীর মহড়া চলছে। কিন্তু হঠাৎ সবাই ছুটে পালাতে শুরু করল। আমি ছুটে গিয়ে দেখি, আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন, মাথায় গুলি লেগেছে। আমি শুধু তার পাশে বসে থাকলাম। কিছু বুঝতে পারছিলাম না—প্রতিক্রিয়া জানানোর শক্তিও ছিল না আমার মধ্যে।”

আমার ছেলেও তার মুখোমুখি হয়ে বলল, কুত্তে, মেরে বাবা কো মারা, হুমেই ভি মার দালো (তুমি কুকুর, তুমি আমার বাবাকে মেরে ফেলেছ, আমাদেরও মেরে ফেলো)।’

পল্লবীর ভাষায়, “তারা শুধু পুরুষদের টার্গেট করছিল। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তিন-চারজন বন্দুকধারী। আশপাশে অনেক নবদম্পতি ছিলেন। নারীদের সাধারণত ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছিলাম, হিন্দু পুরুষদেরই তারা খুঁজে খুঁজে মারছিল। সেখানে প্রায় ৫০০ পর্যটক ছিল তখন।”

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পল্লবীর একটাই আবেদন—“আমি আমার শহর শিবমোগায় ফিরতে চাই, তবে একা নয়। আমি আমার স্বামীর মৃতদেহ নিয়েই ফিরব। আমরা তিনজন যেভাবে এসেছিলাম, সেভাবেই ফিরে যেতে চাই। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যেন আমার এই শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করা হয়।”

এই হামলা কাশ্মীরে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দু’জন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।

এক সময় যেখানে মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজতে যেত, সেই পেহেলগাম আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রক্তের ছায়া কতটা গভীর হতে পারে। পল্লবীর শোক, অভিজয়ের হাহাকার আর এক স্তব্ধ পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়ে গেল—যেখানে শান্তি শুধু কাগজে লেখা একটি শব্দ।
 

ঢাকা এক্সপ্রেস/ বিডি

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন