শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৪৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৭:২১, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট'। এই ঘটনার পর, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে। এর ফলস্বরূপ ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যা পাকিস্তানের কৃষি নির্ভরশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে বিবেচনা করছে।
তবে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকেও এসেছে পালটা প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে ফের একটি বড় আকারের সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
পেহেলগামে হামলার পর একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করা, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করা। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করে, ভারতীয়দের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয়, ভারতীয় বিমানগুলোর জন্য নিজেদের আকাশপথ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত তিন রাত ধরে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি চলেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি রোববার (২৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলির ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল রাতের মধ্যে পাকিস্তানের সেনা পোস্টগুলো তুতমারিগালি এবং রামপুর সেক্টরের বিপরীতে কোনো উসকানি ছাড়াই গুলি চালিয়েছে, এবং তাদের সেনারা যথাযথভাবে এর জবাব দিয়েছে। এটি ছিল গত তিন রাতের মধ্যে তৃতীয়বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কাশ্মীর ইস্যু দীর্ঘকাল ধরে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের প্রধান কারণ। উপরন্তু, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে। যদিও উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর, তাই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে, যা কেবল এই দুটি দেশ নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে উভয় দেশের পারমাণবিক ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। তবে সীমান্তে ছোটখাটো সংঘর্ষ বা কৌশলগত উত্তেজনা অব্যাহত থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।
সামরিক শক্তির বিচারে, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে, যেখানে পাকিস্তান রয়েছে দ্বাদশ স্থানে। ভারতের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার, যা পাকিস্তানের ৯ লক্ষ ৩৫ হাজারের তুলনায় অনেক বেশি।
শুধু তাই নয়, ট্যাংক, কামান এবং বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রেও ভারত পাকিস্তানের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। ভারতের কাছে ৪,২০১টি ট্যাংকের বিপরীতে পাকিস্তানের রয়েছে ২,৬২৭টি। যুদ্ধবিমানের সংখ্যায় ভারত ৫১৩টি নিয়ে পাকিস্তানের ৩২৮টির চেয়ে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে ভারতের নৌবাহিনীর হাতে রয়েছে ১টি বিমানবাহী রণতরী, ১১টি ডেস্ট্রয়ার, ১২টি ফ্রিগেট ও ১৮টি করভেট। যেখানে পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে রয়েছে ৯টি ফ্রিগেট ও ৬টি করভেট।
তবে, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যেখানে ভারতের রয়েছে ১৮০টি। এই পারমাণবিক সক্ষমতা উভয় দেশকেই সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রাখতে পারে, কারণ এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি কারো জন্যই কাম্য নয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যেখানে পাকিস্তানের বাজেট এর এক-সপ্তমাংশেরও কম। এই বিপুল বাজেট ভারতকে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি কেনার ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট সুবিধা দেয়।
তবে, যুদ্ধ কেবল সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করে না। ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সৈন্যদের মনোবলও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ কোনো পক্ষের জন্যই জয় বয়ে আনবে না, বরং উভয় দেশকেই দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক মহল কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের উপর জোর দিচ্ছে। যদিও অতীতেও বহুবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলেই সমস্যার সমাধান খোঁজা হয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ বিডি