ঢাকা, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৬

ভারত-পাকিস্তান পানি যুদ্ধ

দুই দেশের জন্য সিন্ধু নদী কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২০:০৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

দুই দেশের জন্য সিন্ধু নদী কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ওই আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে এখন প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি আসলেই সিন্ধু নদ ও এর আরও দু'টো শাখা নদীর পানির প্রবাহ পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিতে পারবে?

এই চুক্তির অধীনে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের ছয়টি যৌথ নদীর পানি ন্যায্যতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বে এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলো। গত কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তানের মাঝে দু'টো যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু চুক্তি বাতিল হয়নি।ওই হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এই চুক্তি সেগুলোর মাঝে অন্যতম। ভারত বলছে, সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পাকিস্তানের মদদ আছে।

যদিও পাকিস্তান তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটি বরং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পানি আটকে দেওয়ার যে কোনো পদক্ষেপ ‘যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে।’ চুক্তি অনুযায়ী- সিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান। তবে এই নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে আগেও দুই দেশের মাঝে বিরোধ হয়েছে।

সিন্ধু নদীর পরিচয়

সিন্ধু এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ একটি নদ। এটি মানস সরোবর হ্রদের পার্শ্ববর্তী তিব্বত মালভূমি থেকে উৎপত্তি লাভ করে। সেখান থেকে নদীটি জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিলগিট-বালতিস্তান ও হিন্দুকুশ পর্বতমালার দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং তারপর সিন্ধু পাকিস্তানের করাচির বন্দর নগরীর নিকটবর্তী আরব সাগরে মিলিত হওয়ার জন্য পাকিস্তানজুড়ে দক্ষিণ অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে। অবস্থান ও গতিপথের কারণে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের জন্যই সিন্ধু হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরই এ নদের পানির অধিকার নিয়ে বাধে ভারত-পাকিস্তান বিবাদ।

পাঞ্জাবে বিভাজন

সিন্ধুর পানি সেচের কাজে অনাদিকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে এসেছে। যদিও আধুনিক সেচ প্রকল্পের কাজ ১৮৫০-এর দশকে শুরু হয়। তবে দীর্ঘদিন ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীন থাকায় ব্রিটিশরা নিজ প্রয়োজনেই সেখানে বড় বড় খাল খননের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি প্লাবিত চ্যানেলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়, সেই সঙ্গে আধুনিকীকরণও। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তানকে বিভাজনকারী র‍্যাডক্লিফ রেখা বিভাজিত করে পাঞ্জাবকেও। এর ফলে পূর্ব পাঞ্জাব ভারতে ও পশ্চিম পাঞ্জাব পাকিস্তানে পড়ে। এ বিভাজনরেখা থেকেই সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে তৈরি হয় বিরোধ। কারণ সিন্ধু অববাহিকার উৎস থেকে উৎপত্তি হওয়া তার পাঁচ উপনদী ছিল ভারতে। তাই এ নদীগুলোর পানি দুই দেশে ন্যায্যভাবে ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘ সময় চলেছে বিরোধ।

পানি যুদ্ধ ও চুক্তির শুরু

দেশভাগের প্রথম বছরগুলোয় সিন্ধুর পানি নিয়ে আন্তঃআধিপত্য চুক্তির মাধ্যমে পানি বণ্টন করা হয়েছিল, যা ১৯৪৮ সালের ৪ মে নির্ধারিত হয়। স্বল্পমেয়াদি এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ’৪৮-এর ১ এপ্রিল এবং মেয়াদ শেষ হতেই ভারত পাকিস্তানে প্রবাহিত খালগুলোয় পানি প্রবাহ রুখে দেয়া শুরু করে। এমনকি সিন্ধুর পানি বণ্টন সমস্যা থেকেই সে বছর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধও হয়েছিল। পরে একই বছরের ৪ মে দুই দেশের আন্তঃডোমিনিয়ন অ্যাকর্ড বা আন্তঃঅধিরাজ্য চুক্তি নামে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সিন্ধু জল চুক্তিতে বলা হয়, ভারত সরকারকে পাকিস্তান বার্ষিক অর্থ প্রদানের বিনিময়েই সিন্ধু অববাহিকার পাকিস্তানের অংশে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে ভারত বাধ্য থাকবে। চুক্তিটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছার আশায় পরবর্তী আলোচনার ভাবনা রেখেই তাৎক্ষণিক এটি স্টপগ্যাপ ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। তাই বলা যায়, উভয় দেশ নিজেদের সমস্যাগুলো সাময়িকভাবে কাটিয়ে ওঠার উদ্দেশ্যেই এ চুক্তি করেছিল। স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজন ছিল পরবর্তী সময়ে দুই দেশের আলোচনা। তবে কোনো পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানের সঙ্গে আপস করতে রাজি ছিল না। তাই তাদের আলোচনাও সে অর্থে সুফল বয়ে আনেনি। ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সে সময়ে নদীগুলোর পানিপ্রবাহ সরাসরি করে দেয়ার যেকোনো পরিকল্পনা থেকে ভারতকে বাধা দেয়ার জন্য পাকিস্তানের পক্ষে কিছুই বলার ছিল না।

যদিও পাকিস্তান বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু ভারত বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল সংঘর্ষ এড়াতে দ্বিপক্ষীয় সমাধানের প্রয়োজন। কিন্তু ১৯৫১ সাল পর্যন্ত উভয় পক্ষের বিষয়টি সমাধানে আর কোনো বৈঠক হয়নি এবং পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ে। তবে সে সময়ে পাকিস্তান কিছুটা কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিল। কারণ পানি বণ্টন সঠিকভাবে না হওয়া এবং ভারতের পানি বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনাগুলো পাকিস্তানের কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। দেশে মোট ফলন অনেকাংশে কমে যায়। সব মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যদিও আদি থেকেই ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব, তবে দেশভাগের পর আরো সুস্পষ্ট হয়েছে এর পেছনের কারণগুলো। এর মধ্যে সে সময় সিন্ধুর পানি বণ্টনই ছিল অন্যতম।

মধ্যস্থতায় বিশ্বব্যাংক

’৪৭-এ আপস করতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও উভয় জাতি একটি সমাধান খুঁজতে উদ্বিগ্ন ছিল। কারণ সিন্ধু বিরোধ অমীমাংসিত হলে নিজেদের মধ্যে সে সময়ে উত্তেজনা বাড়বে অথবা প্রকাশ্য শক্রতার দিকে নিয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে ১৯৫১ সালে ডেভিড লিলিয়েনথাল, টেনেসি ভ্যালি অথরিটি ও ইউএস অ্যাটমিক এনার্জি উভয় কমিশনের সাবেক প্রধান, বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন কোলিয়ারের জন্য কিছু নিবন্ধ লেখার উদ্দেশ্যে গবেষণার কাজে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তিনি সে সময়ে পরামর্শও দিয়েছিলেন ভারত ও পাকিস্তানের উচিত বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ এবং অর্থায়নে যৌথভাবে সিন্ধু নদ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি চুক্তির দিকে কাজ করা।

তৎকালীন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইউজিন আর-ব্ল্যাক। তিনি দুটি দেশ পরিদর্শন করেন এবং ভারত, পাকিস্তান ও বিশ্বব্যাংকের প্রকৌশলীদের একটি ওয়ার্কিং পার্টির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যেন পানি বণ্টন সমস্যা মোকাবেলা করা যায়। তাদের প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে দুই দেশ এ মধ্যস্থতা মেনে নেয়।

ঐতিহাসিক সিন্ধু জল চুক্তি

ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৪ সালের পূর্বদিকের তিনটি নদী ভারতে এবং পশ্চিমের তিনটি নদীর পানি পাকিস্তান ব্যবহারের জন্য বণ্টন করে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রদান করে বিশ্বব্যাংক। দুই দেশের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং দীর্ঘ ছয় বছর দফায় দফায় দুই দেশের সিন্ধু কমিশন এ বিষয়ে আলোচনার পর অবশেষে ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি বা সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটিতে পশ্চিমের নদী-সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের পানি পাকিস্তানকে এবং পূর্বের নদীগুলো-রাভি, বিয়াস ও সতলেজের পানি ব্যবহারে ভারতকে অনুমতি দেয়া হয়। এ চুক্তিতে উভয় দেশকে বিশেষ কিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। যেন দুই দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। বলা হয় ভূখণ্ডের নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬০ বছরে ভারত-পাকিস্তানকে বেশকিছু সীমান্ত সংঘাত-বিবাদে জড়াতে দেখা গেলেও সিন্ধু জল চুক্তি সেখানে সফলতা পেয়েছে।

সিন্ধু চুক্তির শর্ত কী বলে?

চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী-রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু-সম্পূর্ণভাবে ভারতের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ, আর পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদী-ইন্দাস, জেলাম ও চেনাব-প্রধানত পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত। চুক্তি অনুসারে ভারত সীমিত পরিসরে এই পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানি ব্যবহার করতে পারে, তবে বড় প্রকল্প নেওয়ার আগে পাকিস্তানের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এখন ভারত বলছে, তারা আর এই তথ্য বিনিময়ের নিয়ম মানবে না।

ভারতের পক্ষে পানি আটকানো কতটা সম্ভব?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবতা হলো—ভারতের বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানি পুরোপুরি থামানো বা অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। এর কারণ হলো:

ভারতের বিদ্যমান জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বেশিরভাগই ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ প্রকৃতির, অর্থাৎ সেগুলো পানি সংরক্ষণ করে না, বরং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন বা পানি সংরক্ষণের জন্য বড় খাল বা জলাধার নির্মাণের মতো অবকাঠামো ভারতের কাছে নেই। ভূপ্রকৃতি দুর্গম এবং পর্বতময় হওয়ায় নতুন বাঁধ নির্মাণ করাও অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও পরিবেশগত বাধাও রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে, যখন পানির প্রয়োজন বেশি কিন্তু সরবরাহ কম, তখন সীমিত কিছু পানি রোধ করে পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে চাপ তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তথ্য আদান-প্রদানে প্রভাব

চুক্তি অনুযায়ী, বর্ষাকালের আগাম বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতকে হাইড্রোলজিক তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করতে হয়। এই তথ্য বন্ধ করে দিলে বিশেষ করে বর্ষার সময়ে, পাকিস্তানের জন্য তা বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

পানি কি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারযোগ্য?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, পানি ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক কৌশল। ভারতের বাঁধগুলো সীমান্ত থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। হঠাৎ করে পানি ছাড়া হলে ভারতের নিজস্ব এলাকাই প্লাবনের ঝুঁকিতে পড়বে। যদিও পলি বা সিল্ট ছেড়ে দিলে পাকিস্তানের নিম্নভাগে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির প্রভাব

সিন্ধু নদের উৎপত্তি তিব্বতে, যা চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে ভারত যদি এই নদের পানি ব্যবস্থাপনায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে চীনও ব্রহ্মপুত্র নদ (যা ভারতে যমুনা নামে প্রবাহিত) নিয়ে পাল্টা কৌশল নিতে পারে, যেমনটি ২০১৬ সালে ঘটেছিল।

পরিস্থিতি বলছে, ভারতের পক্ষে এখনই সরাসরি সিন্ধুর পানি বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে চুক্তির শর্তে ধীরে ধীরে পরিবর্তন এনে ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভারতের পক্ষে কিছুটা চাপ প্রয়োগ সম্ভব। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং এতে ভূরাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়া অবধারিত।

সূত্র: বিবিস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডন

আরও পড়ুন