শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩০, ১৬ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৪১, ১৬ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
শহীদদের স্মরণে সরকার এ দিনটিকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় প্রার্থনার আয়োজন, শহীদদের নামে স্মৃতি রক্ষায় নানা প্রকল্প গ্রহণসহ দিনটি ঘিরে সর্বস্তরে চলছে নানা কর্মসূচি।
এই উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তার পক্ষ থেকে জাতির প্রতি এসেছে একাত্মতার অঙ্গীকার- শহীদদের রক্তের ঋণ শোধে বৈষম্যহীন, স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টাসহ শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষানীতিনির্ধারকরা।
দিনটিকে কেন্দ্র করে শুধু সরকারি নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও পেশাজীবী মহল থেকেও নেওয়া হয়েছে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর নানা কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া এ দিবস গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্য আত্মোৎসর্গকারীদের প্রতি একটি সম্মান, একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা- এই আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।
এদিকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আজ বুধবার যে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে তার ঘোষণা এসেছে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই)। এদিন মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় শোক পালন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
এতে বলা হয়, সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে বুধবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে।
এদিন শহীদদের মাগফেরাতের জন্য বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
দিবসটিকে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং এদিন ছুটি থাকবে না।
কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। এরই মধ্যে এ দিনটিকে সরকার ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ঘোষণা করেছে। জুলাইয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচিতে দিনটি পালন করবে।
জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বলেছেন, জুলাই শহীদরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাবো- আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ও সন্ত্রাসীদের হামলায় এই দিনে চট্টগ্রাম, রংপুর ও ঢাকায় অন্তত ছয় জন শহীদ হন। ক্ষণজন্মা অকুতোভয় এই বীরদের আত্মদান আন্দোলনে তীব্র গতির সঞ্চার করে। প্রতিবাদে দেশজুড়ে রাজপথে নেমে আসে লাখো শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতা। আন্দোলনের তীব্রতার সঙ্গে বাড়তে থাকে শহীদদের সংখ্যা। বৈষম্য ও কোটাবিরোধী আন্দোলন অচিরেই রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। সর্বস্তরের মানুষের দুর্বার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে হয় মুক্তির নতুন সূর্যোদয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জুলাই শহীদরা চব্বিশের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে এক মহাকাব্যিক বীরত্বগাথা রচনা করে গেছেন। শহীদ ও আহত জুলাইযোদ্ধাদের অবদানকে সমুন্নত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তাদের ও তাদের পরিবারের কল্যাণে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। জুলাই শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত ও গেজেট প্রকাশের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসিক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আহত জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণেও অনুরূপ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আত্মদানকারী সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।
আজ বেরোবিতে যাচ্ছেন চার উপদেষ্টা: আজ পালিত হবে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দিবসটির কর্মসূচিতে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা। তারা হলেন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পানিসম্পদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীরপ্রতীক।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান।
এদিন সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আবু সাঈদের পৈতৃক গ্রাম ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টায় কবর জিয়ারত হয়। পরে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কালো ব্যাজ ধারণ ও শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ১০টা ১৫ মিনিটে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা। বিকাল সাড়ে ৩টায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, অনুষ্ঠানে শহীদ আবু সাঈদের বাবা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। শহীদ পরিবারের আরো ২১ জন প্রতিনিধি মঞ্চে থাকবেন। উপদেষ্টাসহ অন্যান্য অতিথিরা থাকবেন দর্শক সারিতে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি: আবু সাঈদ ও জুলাই স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। আজ রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করবে জামায়াতে ইসলামী। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৬ জুলাই আবু সাঈদ শহীদ হন, সেদিনকে বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এদিন সারা দেশে শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে আরো নানা পেশাজীবি ও বেসরকারি সংগঠন দিনটি পালন করবে। সংবাদপত্রগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ