ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

‘আপনার মুখ মনে রাখবো’- সাংবাদিককে কাদেরের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮:৪৫, ২৭ মে ২০২৫

‘আপনার মুখ মনে রাখবো’- সাংবাদিককে কাদেরের হুমকি

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলের এডিটর ইন চিফ নাজমুস সাকিবের সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়ে বেশ উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া জানান। সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে কাদের এমন কিছু মন্তব্য করেন, যা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাথরুমে লুকিয়ে থাকার প্রশ্নে সরল স্বীকারোক্তি

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই ভারতের একটি গণমাধ্যমে দেওয়া কাদেরের পুরনো এক বক্তব্য ঘিরে প্রশ্ন ওঠে। ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের সময় তিনি বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন কিনা—জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘এছাড়া কি উপায় ছিল?’

এই উত্তরের পরেই আসে আরও সরাসরি প্রশ্ন—ছাত্রদের সহায়তায় তিনি প্রাণে বেঁচেছিলেন কিনা। জবাবে কাদের বলেন, “হ্যাঁ এটাও তো ঠিক।” তিনি বলেন, “ওরা (ছাত্ররা) বলছিল, আপনার প্রতি রাগ ছিল, কিন্তু সামনে এসে আমাদের রাগ পানি হয়ে গেছে।”

দেশত্যাগ নিয়ে মুখ খোলেন

আন্দোলনের সময় তিন মাস দেশে থাকার পর হঠাৎ বিদেশে চলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, “এটা কি বলা যায়? তখন তল্লাশি হচ্ছিল, শরীর খারাপ হচ্ছিল, অনেক ওষুধ লাগে। আমি ভাবলাম, ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়ানোর লোক থাকবে না। তাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

ভোট ও জনরোষ প্রসঙ্গে উত্তেজনা

নাজমুস সাকিব প্রশ্ন তোলেন—আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের ক্ষোভ কি যৌক্তিক নয়? জবাবে কাদের উন্নয়নমূলক প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা উল্লেখ করেন। তবে ভোট অনিয়মের প্রসঙ্গে স্বীকার করেন, ‘এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমাদেরও দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কাঠামোটা ভিন্ন। আমরা একটা লিগ্যাল ইলেকশন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ চায় শেখ হাসিনা আবার আসুক।’

সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা যদি দেশত্যাগ করে থাকেন, তবে সেটি কি লজ্জাজনক নয়? কাদের পাল্টা বলেন, “না, আমি মনে করি না। তাকে হত্যা করার প্ল্যান ছিল। তাই বাঁচার জন্যই দেশ ছাড়তে হয়েছে।”

বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ ও প্রতিক্রিয়া

বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়েও দেশ ছাড়েননি—এই প্রসঙ্গ তুললে কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা কোনো কম্প্রোমাইজ করেননি, বরং বেঁচে থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

সাংবাদিককে হুমকি?

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে যখন বলা হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক, তখন কাদের বলেন, ‘দি সান রাইজেস... বাট ডিনাই... বিফোর।’ এবং তারপর সরাসরি মন্তব্য, ‘আপনার মুখ, আপনার বক্তব্য... যদি আমরা ফিরি, তখন তো আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।’

এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিহিংসার আভাস থাকায় সাংবাদিক পাল্টা বলেন, ‘তাহলে কি আপনারা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে যাবেন?’ উত্তরে কাদের বলেন, ‘না, আমরা করবো না। কিন্তু আপনি পালাবেন। আপনি নিজেই জানেন, আপনি কী করতেছেন।’

‘শত্রুতামূলক প্রশ্ন’ মন্তব্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত

সাংবাদিক যখন জিজ্ঞেস করেন—‘আবার যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে কঠিন প্রশ্ন করলেই কি সাংবাদিকদের দেশ ছাড়তে হবে?’ কাদের পাল্টা বলেন, ‘এটা কঠিন প্রশ্ন না, শত্রুতামূলক প্রশ্ন।’

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কাদের সাংবাদিককে ‘বায়াসড’ ও ‘ইউনূসপন্থী’ বলে অভিহিত করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার ইন্টারভিউর দরকার কী? আপনি তো সেটা প্রচারই করতে পারবেন না।’

শেষদিকে সাংবাদিক বলেন, “আমি শুধু সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করছি।” এর পরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া

এই সাক্ষাৎকার ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক চর্চার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই কাদেরের বক্তব্যকে স্পষ্ট হুমকি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন তিনি আবেগের বশে কথা বলেছেন। এ নিয়ে এখনো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন