ঢাকা, রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

৩৯ দিনে ১৩৯৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১১:৫৩, ১৩ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৩৭, ১৩ জুন ২০২৫

৩৯ দিনে ১৩৯৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

প্রতীকী ছবি

সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী চারটি এলাকা দিয়ে আরো ৭০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ-ইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

বুধবার (১১ জুন) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তাদের পুশ-ইন করা হয়। সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আটক করার পর বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। আটকদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ, ১৮ নারী ও ৩০ শিশু রয়েছে। তারা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বাসিন্দা।

পুশ-ইনের শিকারদের মধ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সীমান্তের মিনাটিলা ও শ্রীপুর এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালাইরাগ সীমান্ত দিয়ে ৫৩ জন এসেছেন। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছেন আরো ১৭ জন। আর লালমনিরহাটের আদিতমারী সীমান্ত দিয়ে সাতজনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৩৯৭ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে ৭৮ জনকে সুন্দরবন এলাকা দিয়ে পুশ-ইন করা হয়েছে। বাকি এক হাজার ৩১২ জনকে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বেআইনিভাবে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। 

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও মানবাধিকারকর্মীরা ঠেলে পাঠানোর এ প্রক্রিয়া আইনসংগত নয় বলে মন্তব্য করলেও পুশ-ইন বন্ধ হচ্ছে না। 

ভারতের মানবাধিকারকর্মী কিরীটী রায় বলেন, ধরলাম আর পাঠালাম– এটি তো সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না। এখানে আদালত আছে। যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা পাঠানো হয়েছে, যারা দিল্লির ইউএনএইচসিআরের কার্যালয়ের কার্ডধারী। 

এ নিয়ে ৩ জুন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারত থেকে বাস্তবিক অর্থে ‘পুশ-ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের বিদ্যমান কনস্যুলার সংলাপের মাধ্যমে এর সুরাহা করা যায় কিনা, সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত থেকে পুশ-ইন হচ্ছে। সেটা ফিজিক্যালি (সীমান্তে বাধা দিয়ে) ঠেকানো সম্ভব নয়। এটি নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান হচ্ছে। 

বিজিবি সিলেট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক বলেন, ৭০ জনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছিলেন। ৪৮ বিজিবির আওতাধীন নোয়াকোট, কালাইরাগ, শ্রীপুর ও মিনাটিলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের পুশ-ইন করে বিএসএফ। পরে আটক করা হয়। এর মধ্যে কালাইরাগ সীমান্ত থেকে দুটি পরিবারের ১৩ জন, মোকামপুঞ্জি সীমান্ত থেকে দুই পরিবারের ১৭ জন, মিনাটিলা এলাকা থেকে চার পরিবারের ২৩ জন এবং ছাতকের নোয়াকোট সীমান্ত এলাকার ছনবাড়ি থেকে চারটি পরিবারের ১৭ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ৪৩ জন কুড়িগ্রামের ও লালমনিরহাটের ২৭ জন।

সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ৪ মে থেকে গত ৩৯ দিনে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩২ জন, সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৬৮, মৌলভীবাজার ৩৮০, হবিগঞ্জ ৪১, সুনামগঞ্জ ৩৩, কুমিল্লা ১৩, ফেনী ৫২, কুড়িগ্রাম ৯৩, লালমনিরহাট ৯২, ঠাকুরগাঁও ২৬, পঞ্চগড় ৩২, দিনাজপুর ২৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৭, কুষ্টিয়া ৯, মেহেরপুর ৪২,  চুয়াডাঙ্গা ১৯, ঝিনাইদহ ৫২ এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ২৩ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের গহিন  অরণ্যের মান্দারবাড়িয়া এলাকা দিয়ে ৭৮ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। 

এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ১২ নারী, পুরুষ ও শিশুকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে বিএসএফ। এই দুই সীমান্ত দিয়ে একযোগে পুশ-ইনের চেষ্টা চালানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে বিএসএফ পাটগ্রামের শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী সীমান্তের ৮৪৭ পিলারের কাছে সাতজন ও হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া বড় মসজিদ সীমান্তের ৮৮৯/ ১০ এস পিলার এলাকা দিয়ে পাঁচজনকে পুশ-ইনের চেষ্টা করে। তবে বিজিবি ও স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়। ওই ১২ জন এখন সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করছেন। একই সময় আদিতমারী উপজেলার দীঘলটারী সীমান্তের ৯২৬/৩ এস পিলার দিয়ে সাতজনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তগুলোতে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। 

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম জানান, আদিতমারী সীমান্ত দিয়ে যাদের পুশ-ইন করা হয়েছে, তারা একই পরিবারের সদস্য। স্বজনের উপস্থিতিতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিএসএফ রাতের আঁধারে যেভাবে পুশ-ইন করছে, এটি অমানবিক। 

এর আগে ২৮ মে লালমনিরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৫৮ জনকে পুশ-ইনে ব্যর্থ হয়ে ফেরত নেয় ভারত। এর দু’দিন পর পাটগ্রাম ও বুড়িমারীতে আট ভারতীয় নাগরিককে পুশ-ইন করে বিএসএফ। তারা সবাই আসাম প্রদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।  

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন