ঢাকা, রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ইরানের আরও তিন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০:৩৮, ১৪ জুন ২০২৫

ইরানের আরও তিন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ইরানের আরও তিনজন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৪ জুন) দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি হামলায় মোট ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম। খবর—এএফপি।

নতুন করে নিহত বিজ্ঞানীরা হলেন—আলী বেকাই করিমি, মনসুর আসগারি ও সাঈদ বোরজি। ইরানি সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, তারা সবাই ‘ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী সরকারের’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

এর আগেও নিহত হয়েছিলেন প্রভাবশালী বিজ্ঞানীরা

ইসরায়েলি হামলায় আগেই প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের পরমাণু গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ফেরেইদুন আব্বাসি। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক শক্তি কমিশনের প্রধান ছিলেন এবং পরে সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২0-২৪ মেয়াদে তিনি খোলাখুলি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষপাতী হিসেবে মত প্রকাশ করেন।

চলতি বছরের মে মাসে এক টিভি সাক্ষাৎকারে আব্বাসি বলেন, “ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র বানায়, সেটা আত্মরক্ষার জন্যই হবে।” ধারণা করা হচ্ছে, ওই মন্তব্যের পরই তিনি ইসরায়েলের নজরে পড়েন।

নিহতদের মধ্যে আরও ছিলেন পরিচিত একাডেমিক ব্যক্তিত্ব। নিহত বিজ্ঞানীদের তালিকায় আরও আছেন:

মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি, আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান

আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর, শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান

আহমেদ রেজা জোলফাঘারি ও আমির হোসেইন ফেকহি, উভয়েই ছিলেন ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক

এদের প্রত্যেকেই ইরানের পরমাণু গবেষণা এবং প্রকৌশল শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

আইআরজিসি কমান্ডারও নিহত, অভিযোগ ইসরায়েলের

এছাড়া নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের আইআরজিসি (ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস)-এর বিমান ও মহাকাশ শাখার প্রধান আমির আলি হাজিযাদেহ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তিনি মাটির নিচে একটি গোপন সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন, যেখানে ইসরায়েলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

আইডিএফ আরও জানিয়েছে, ওই ঘাঁটিতে উপস্থিত ছিলেন আইআরজিসির বিমানবাহিনীর আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। হামলায় তাদের বেশিরভাগই নিহত হয়েছেন। হাজিযাদেহ ইরানের মিসাইল কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং গত বছরের অক্টোবর ও এপ্রিলে ইসরায়েলের ওপর হামলার নির্দেশও তিনিই দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে আইডিএফ।

চলমান উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়ছে

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে পঙ্গু করতে ইসরায়েল যে কৌশলে ‘টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন’ চালাচ্ছে, তা স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী কূটনৈতিক রীতিনীতির বাইরে চলে যাচ্ছে। আর তাতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী যুদ্ধ বা পাল্টা হামলার আশঙ্কা বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন ইরানের প্রতিক্রিয়ার দিকে। টেহরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলাগুলোর দায় স্বীকার বা প্রতিশোধের হুমকি না দিলেও, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে—কোনো না কোনোভাবে এর জবাব আসতে পারে।

এমআরএইচ

আরও পড়ুন