ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯:৩৯, ১৪ জুন ২০২৫
কিন্তু মাত্র ছয় মাস পরই পরিস্থিতি বদলে যায়। ইসরায়েলের ইরান হামলা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় দেশটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই যুদ্ধ-ঝুঁকি শুধু ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, তার রাজনৈতিক ঘাঁটিতেও বিভক্তি তৈরি করছে।
ট্রাম্পের নির্বাচনী মূলমন্ত্র ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। কিন্তু এখন তার অনেক রক্ষণশীল সমর্থকই মনে করছেন, ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন দেওয়া এই দর্শনের সঙ্গে যায় না।
কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেন,“ট্রাম্পের মূল সমর্থক ঘাঁটির একটা বড় অংশ এখন যুদ্ধবিরোধী। তারা মনে করে ইসরায়েলকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র এসব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর ফলে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের নীতিগত ব্যর্থতা বাড়ছে।”
ট্রাম্পপন্থী প্রভাবশালী রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন বলেন,“ইসরায়েল যদি যুদ্ধ করতে চায়, সেটা তাদের অধিকার। তারা স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু আমেরিকার সহায়তা নিয়ে নয়।”
তিনি সতর্ক করেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ ভবিষ্যৎ প্রজন্মে সন্ত্রাসবাদ বাড়িয়ে দেবে এবং মার্কিনিদের রক্তপাত ঘটাবে।
তিনি স্পষ্ট বলেন,“আরেকটি পথ আছে—ইসরায়েলকে বাদ দাও। তারা নিজেরা যুদ্ধ করুক।”
সিনেটর র্যান্ড পল বলেন,“আমেরিকানরা এই অবিরাম যুদ্ধ চায় না। ২০২৪-এ তারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য।”
কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিন এক্স-এ লিখেছেন,“আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। এটাই আমার অবস্থান।”
ট্রাম্পপন্থী সক্রিয় কর্মী চার্লি কার্ক বলেন,“আমাদের ম্যাগা ঘাঁটি যুদ্ধ চায় না। তারা চায় না যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েলের দ্বন্দ্বে জড়াক।”
হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন,“ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না, কিন্তু আমি তাদের সফল দেখতে চাই। কূটনীতির পথেই সমাধান খুঁজি।”
সেই সময় ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনার ষষ্ঠ রাউন্ডের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু হামলার আগেই ট্রাম্প বলেন—তিনি জানতেন ইসরায়েল হামলা করতে যাচ্ছে। যদিও এই হামলা তিনি আটকালেন না।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন,“ইরান যদি আমাদের পরামর্শ না শোনে, তাহলে যা হবে, তা তাদের ধারণার বাইরে ভয়াবহ হবে।”
ট্রাম্প আলোচনার কথা বললেও, মূলত কৌশলে একটি চুক্তি অকার্যকর করে হামলার পটভূমি তৈরি করেছেন। তিনি জানতেন হামলা হবে, কিন্তু সবাইকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন—আগে কূটনীতি চলবে।
ক্যাটো ইনস্টিটিউটের গবেষক জন হফম্যান বলেন,“৫০ বছরের কম বয়সী রিপাবলিকানদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বাড়ছে। পিউ রিসার্চের জরিপ বলছে, এই বয়সীদের অর্ধেকই এখন ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে।”
তিনি যোগ করেন,“যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই অনন্ত যুদ্ধ দেখে ক্লান্ত। তারা আর চায় না মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানো হোক।”
২০০১ সালে বুশ প্রশাসনের সময় ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করা হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে ২০ বছর। হাজার হাজার মার্কিন সেনা নিহত হন, বহু মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
ট্রাম্প তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন—“আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে আফগানিস্তানের এমন ভেঙে পড়া হতো না। এটা আমাদের দেশের সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা।”
তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের সঙ্গেও লিজ চেনি ও ডিক চেনির সম্পর্ককে যুক্ত করে কটাক্ষ করেন, “কমলা চেনিদের মতো যুদ্ধবাজদের সঙ্গে মিলে মুসলিম দেশগুলোতে হামলার পক্ষ নিচ্ছেন। চেনিরা লাখো মানুষ হত্যা করেছে।”
যদিও ট্রাম্প শান্তির বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে তিনি নিজেই এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ