শিরোনাম
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:৩১, ১৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১৭, ১৮ জুন ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
সেই ছবিগুলোর একটি বিশেষ দিক হলো— তার পায়ের নখে থাকা কালো নেইলপলিশ। এমন ছবি দেখে এখন অনেক সমর্থকও নিজেদের ছবি পোস্ট করছেন ঠিক একই ভঙ্গিমায়। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, খালি গায়ে, জিমের ব্যাকড্রপে তোলা কোনো ছবি দেখলেই অনেকের প্রথমেই মনে পড়ে যায় রোনালদোর কথা।
পর্তুগিজ এই কিংবদন্তি খেলোয়াড় আসলে এমন ছবিকে নিজের একটা ব্র্যান্ডে পরিণত করে ফেলেছেন। শরীরচর্চায় নিবেদিত, নিজের ফিটনেসের প্রতি একনিষ্ঠ এই ফুটবলারের জন্য এ ধরনের ছবি যেন এখন তার পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। ছবিগুলোতে সাধারণত রোনালদোকে দেখা যায় জিমে, খালি গায়ে, শক্ত করে দুই হাত সামনে এনে শরীরের পেশির রেখাগুলো দেখাতে। পেটের পেশিগুলোর ভাঁজ স্পষ্ট, দেহে একবিন্দু মেদ নেই। চল্লিশ ছুঁইছুঁই বয়সেও যেভাবে নিজের শারীরিক প্রস্তুতি ধরে রেখেছেন, তা বিশ্বব্যাপী বহু মানুষকে মুগ্ধ করেছে।
কয়েক বছর ধরে রোনালদোর এমন ‘ট্রেডমার্ক’ ছবিতে সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হয়েছে তার বড় ছেলে, ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে তিনিও একই ভঙ্গিতে ছবি দেন, যেন বাবার নিখুঁত অনুকরণ। এ ছবি শুধু বাবা-ছেলের ঘনিষ্ঠতা বা মিলের বার্তাই দেয় না, এর পেছনে ফুটে ওঠে এক অনুপ্রেরণামূলক চিত্র— বাবার মতোই পরিশ্রমী, শরীরচর্চায় মনোযোগী ও খেলার প্রতি নিবেদিত এক নতুন প্রজন্মের ফুটবলারের আগমন।
ছবির ক্যাপশনেও রোনালদো বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন। পর্তুগিজ ভাষায় লেখা ছিল, Tal pai tal filho— যার বাংলা অর্থ, যেমন বাবা তেমন ছেলে বা বাপকা বেটা। এই ক্যাপশন শুধু কথার কথা নয়, বরং বাস্তবতাও। কারণ, ট্রান্সফার মার্কেট অনুযায়ী, ১৫ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র ইতোমধ্যেই পর্তুগালের অনূর্ধ্ব–১৫ দলের হয়ে গোল করে অভিষেক রাঙিয়ে ফেলেছেন। ফুটবলের প্রতি তার ক্ষুধা, দক্ষতা এবং নিজেকে প্রস্তুত রাখার ধরণ অনেকটাই বাবার মতো।
এই সবই হয়তো শুনে আপনার মনে হতে পারে— এতে নতুন কিছু নেই। বাবা-ছেলের এমন ছবি তো আজকাল প্রায়ই দেখা যায়। যুক্তি একদমই অমূলক নয়, তবে এবার যা নিয়ে আলোচনা, সেটি একটু আলাদা। ছবি দেখার সময় চোখে পড়ে, রোনালদোর পায়ের নখের ওপর ছোপ ছোপ কালো রং— সেটি আসলে নেইলপলিশ। প্রশ্ন হলো, কেন পায়ে নেইলপলিশ লাগান রোনালদো?
উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলে পরিষ্কার হয়ে যায়, এটি নিছক ফ্যাশন বা অদ্ভুত শখ নয়। বরং, এর পেছনে রয়েছে একেবারে বাস্তব, পারফরম্যান্স ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কারণ। দ্য অ্যাথলেটিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদো আগেও বহুবার পায়ে নেইলপলিশ ব্যবহার করেছেন। তাকে জুতা বা বুট ছাড়া দেখা গেছে সওনা (বাষ্পীয় গোসল) নিতে গিয়ে, কিংবা ছুটি কাটাতে গিয়ে। এসব ছবিতেও পায়ের নখে নেইলপলিশ দেখা গেছে। অনেকেই ভেবেছেন, এটি বুঝি ফ্যাশনের অংশ। তবে আসলে তা নয়।
পায়ের নখে নেইলপলিশ ব্যবহারের এই প্রবণতা শুরু হয়েছে মিক্সড মার্শাল আর্টসের (এমএমএ) লড়াকুদের মধ্যে থেকে। এর পেছনে যে যুক্তিটি রয়েছে, তা হলো— এই নেইলপলিশ নখকে করে আরও মজবুত, শক্ত। খেলার সময় পায়ের নখে চোট, চাপ, ঘর্ষণ— এসবের ফলে ভেঙে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে ফুটবলে, যেখানে খেলোয়াড়দের পায়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে, বুট পরে দৌড়াতে হয় এবং প্রতিপক্ষের ট্যাকলও মোকাবিলা করতে হয়, সেখানে নখ ভেঙে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। রোনালদো এই দিকটি নিয়ে এতটাই সচেতন, পায়ের নখও যেন কোনোভাবে তার খেলায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেজন্যই নেইলপলিশ ব্যবহার করেন। এমনকি এত ক্ষুদ্র একটি বিষয়েও তার দৃষ্টি এড়ায় না— এতেই বোঝা যায়, শরীরের প্রতিটি অঙ্গের যত্নে কতটা মনোযোগী তিনি।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, এই নেইলপলিশ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকেও নখকে সুরক্ষা দেয়। যারা নিয়মিত জুতা বা বুট পরে থাকেন, বিশেষত অ্যাথলেটরা, তাদের পায়ে ঘাম জমে আর্দ্র পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস জন্মানোর জন্য অনুকূল। এর ফল হতে পারে অ্যাথলেটস ফুট বা ছত্রাক সংক্রমণ, যা পরে নখে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নেইলপলিশ একধরনের প্রতিরক্ষার কাজ করে এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধজাত নেইলপলিশ তো ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে সরাসরি কাজও করে।
ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব পোডিয়াট্রি এক সংক্ষিপ্ত গবেষণায় জানিয়েছে, নেইলপলিশ ব্যবহার করলে সুস্থ নখ সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। যদিও এ বিষয়ে সকল চিকিৎসকের মধ্যে পূর্ণ একমত নেই, তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, যারা পায়ের যত্ন নেন না, তাদের মধ্যে নখের সমস্যা হরহামেশাই দেখা যায়।
রয়্যাল কলেজের মুখপাত্র ড. হেলেন ব্রান্থওয়েট জানান, মানুষের পায়ে আড়াই লাখের বেশি ঘামের গ্রন্থি রয়েছে এবং গড়ে প্রতিদিন এক পায়ে প্রায় এক পিন্ট বা এক পোয়া ঘাম হয়। এই ঘাম যদি জুতার ভেতর জমে থাকে, তাহলে তা চামড়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে পায়ের নখেও। তিনি বলেন, অনেক পেশাদার অ্যাথলেট স্টেটমেন্ট নেইল ভার্নিশ ব্যবহার করেন এবং এখন বাজারে এমন চিকিৎসাগত নেইলপলিশও রয়েছে, যা ছত্রাক প্রতিরোধ করে। যদিও সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো— পায়ের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রোনালদোর পায়ে কালো নেইলপলিশ শুধু ফ্যাশনের বাহার নয়, বরং একটি সচেতন, কৌশলগত সিদ্ধান্ত। যার প্রতিটি কাজের পেছনে থাকে পারফরম্যান্সের চিন্তা, সেখানে এই ছোট্ট জিনিসটিরও গুরুত্ব রয়েছে। নিখুঁত শরীর, নিখুঁত প্রস্তুতি এবং নিখুঁত যত্ন— এই তিনের সমন্বয়েই তৈরি হয় একজন রোনালদো।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ