ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:০৮, ১৪ জুন ২০২৫
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে টেস্টের সুপারপাওয়ার অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে চূড়ান্ত গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করেছে প্রোটিয়ারা। টেস্টে ফিরে আসার ৩৩ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সেরা দল।
১৩৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া প্রথম ইনিংস—একটি ফাইনালে যেখান থেকে স্বপ্ন ভেঙে যায় বেশিরভাগ দলের, সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত গল্প লিখে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৮২ রানের লক্ষ্যকে অবলীলায় ছুঁয়ে ফেলে দলটি।
চতুর্থ ইনিংসে এত বড় রান তাড়া করা টেস্ট ইতিহাসে দুষ্কর—১৪৮ বছরের ইতিহাসে এমন কীর্তি মাত্র ৫০ বার ঘটেছে। লর্ডসের মাঠে এমন ঘটনা ঘটেছে এর আগে মাত্র দুবার। দক্ষিণ আফ্রিকা এবার সংখ্যাটিকে তিনে পরিণত করল।
যেখানে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা হতাশ, সেখানে এক প্রোটিয়া ওপেনার যেন ব্যাট দিয়ে লিখলেন নতুন ইতিহাস। এইডেন মার্করাম। মাত্র ছয় মাস আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফেরত এসেছিলেন, আর আজ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বজয়ের স্থপতি।
দারুণ আত্মবিশ্বাসে গড়া ১৩৬ রানের ইনিংস, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসনের এক মিশেল। জয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে আউট হলেও তাঁর নায়কোচিত পারফরম্যান্সই দলের ভিত তৈরি করে দেয়।
প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও ব্যাট হাতে নেমেছিলেন। ৬৫ রানে দিন শুরু করে মাত্র ১ রান যোগ করে আউট হয়ে যান তিনি, তবে তার আগেই মার্করামের সঙ্গে গড়া ১৪৭ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে ছিটকে দেয় ফাইনাল থেকে।
লর্ডসের ড্রেসিংরুমে দাঁড়িয়ে যখন জয় উদযাপন করছিল দল, তখন সবচেয়ে দৃঢ় প্রতিচ্ছবিটি হয়তো ছিল খুঁড়িয়ে খেলা এই অধিনায়কের হাসিমাখা মুখ।
ফাইনালের চতুর্থ দিনের শুরুতে বাভুমার আউট—অনেকের মনে হয়তো ভেসে উঠেছিল ১৯৯২ সালের ব্রিজটাউন টেস্টের স্মৃতি। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট প্রত্যাবর্তনের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও তারা হেরে গিয়েছিল মাত্র ২৬ রান যোগ করেই।
সেই ম্যাচ থেকেই জন্ম নেয় ‘চাপের মুখে ভেঙে পড়া’ দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাতি। বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা টি-টোয়েন্টি—প্রায় প্রতিটি বৈশ্বিক আসরেই সেমিফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনালে হোঁচট খাওয়ার গল্প।
তবে ২০২৫ সালে এসে সেই ইতিহাসে যোগ হলো নতুন একটি অধ্যায়—যেখানে পুরোনো খ্যাতিকে ছুড়ে ফেলে, বিশ্বাস আর সাহসে ভর করে দলটি বলল, “এবার আমরাও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন”।
শেষ ওভারে কাইল ভেরেইনা যখন জয়সূচক রানটি নেন, তখন লর্ডসের ড্রেসিংরুম যেন রূপ নেয় এক আবেগঘন নাট্যমঞ্চে। কেউ জড়িয়ে ধরছেন সতীর্থকে, কেউ চোখের জল লুকাচ্ছেন না।
ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ‘আন্ডারএচিভিং’ দল হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকা আজ সবচেয়ে মূল্যবান অর্জন করে বলছে—“আমরাও পারি। আমরাও পেরেছি।”
অস্ট্রেলিয়া: ২১২ ও ২০৭
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩৮ ও ২৮২/৫ (৮৩.৪ ওভার)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এইডেন মার্করাম (১৩৬ রান)
এমআরএইচ