শিরোনাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩:২৪, ১৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৩:২৫, ১৮ জুন ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ঘটনার প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তার মতে, যে এলাকায় তারা বসবাস করতেন, সেখানে এখন কেবল কিছু কূটনীতিকের বাড়িই অক্ষত আছে, আশপাশের অন্যান্য ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত।
ওয়ালিদ ইসলাম আরো জানান, তারা জর্ডান নামের একটি এলাকায় থাকেন, যেটি তেহরানের তিন নম্বর জেলায় অবস্থিত। এই এলাকাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে পরিচিত, যেখানে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। ইসরায়েল এই এলাকাতেই গত সোমবার সরাসরি ঘোষণা দিয়ে হামলা চালায়। তবে আগেই বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছিল বলে প্রাণহানি কম হয়েছে। তবু ধ্বংসযজ্ঞ চরম।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জরুরি নির্দেশে কর্মকর্তাদের এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়। এরপর দূতাবাস কমপ্লেক্স ছাড়েন কর্মকর্তারা। বর্তমানে তারা তেহরানের অন্য একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা এখন তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিক ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তার মতে, পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।
বর্তমানে তেহরানে আনুমানিক ৪০০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে দূতাবাস। এদের মধ্যে কিছু বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য, কিছু পড়াশোনা এবং কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে ইরানে অবস্থান করছেন।
ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর দূতাবাস একটি হটলাইন চালু করেছে, যাতে বিপদে থাকা নাগরিকরা যোগাযোগ করতে পারেন। সেই হটলাইনে প্রতিদিনই অসংখ্য কল আসছে। ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান।
এ অবস্থায় যে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসার জন্য তেহরানে আসা প্রায় ২০ জন বাংলাদেশি। তারা মূলত কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এসেছিলেন এবং শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হামলা শুরুর পর দূতাবাস তাদের হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল, কারণ সেখানে তুলনামূলক নিরাপত্তা থাকবে বলেই ধারণা ছিল। কিন্তু পরে ওই হাসপাতালেও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তারা গভীর আতঙ্কে পড়ে যান।
আরেকদিকে, অনেকেই বেড়াতে গিয়ে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থেকে যান। তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশি চিকিৎসক ইকরাম আর আজিজুর রহমান, যিনি তার ইরানি স্ত্রীকে নিয়ে গত মে মাসে ইরানে গিয়েছিলেন। তাদের দেশে ফেরার কথা ছিল ১৫ জুন, কিন্তু সংঘাত শুরু হওয়ায় আর ফিরতে পারেননি। তিনি বলেন, কবে ফিরতে পারব, সেটিও বুঝতে পারছি না।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার নিরাপদে প্রবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আপাতত সবাইকে তেহরানের নিকটবর্তী ভারামিন শহরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে কিছুটা হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো বলে আশা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য পাশের সাবেত এলাকায় বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে ভয়ের জায়গা হলো— ভারামিনও তেহরানের ভেতরেই অবস্থিত। ফলে সেখানে হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু বর্তমানে ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না।
ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, যদি মাত্র এক দিনের জন্যও যুদ্ধবিরতি হয়, আমরা তখনই সবাইকে ইরানের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি শুধু তেহরান বা গাজা নয়, বরং গোটা অঞ্চল ও বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক মিশন এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিটি দেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ