শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২১, ১৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৮:২৪, ১৮ জুন ২০২৫
এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই ইরানের অতীতের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন— বিশেষ করে ১৯৫৩ সালের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।
মোসাদ্দেক ইরানের তেলক্ষেত্র জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা তৎকালীন পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনের জন্য ছিল এক বড় হুমকি। তেলের উপর নির্ভরশীল পশ্চিমা দেশগুলো এ পদক্ষেপকে ঠেকাতে তৎপর হয়ে ওঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ এবং ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসআইএস যৌথভাবে মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে একটি গোপন অভ্যুত্থান পরিচালনা করে। প্রোপাগান্ডা, বিশাল বিক্ষোভ এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতা থেকে সরানো হয় মোসাদ্দেককে। তার স্থানে বসানো হয় জেনারেল ফজলুল্লাহ জাহেদিকে।
সিআইএ-র গোপন নথি অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের মাত্র দুই দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন সরকারকে ৫০ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দেয়। যদিও এ বিষয়ে জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি আসে আরও অনেক পরে— ২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ২০১৩ সালে প্রকাশিত সিআইএ নথিতে।
মোসাদ্দেক পতনের পর ইরানে মার্কিনপন্থী রাজতন্ত্রের উত্থান ঘটে। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হন। কিন্তু এই বিদেশি হস্তক্ষেপ ইরানিদের মনে ক্ষোভ তৈরি করে এবং এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে। সে বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হন শাহ। গড়ে ওঠে ইসলামি প্রজাতন্ত্র। ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার সূচনা হয়, যার নেতৃত্বে এখন আছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিহাসের এই প্রেক্ষাপট ইরানিদের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। ফলে শাসন পরিবর্তনের জন্য বাইরের হস্তক্ষেপ বা প্রকাশ্য হুমকি উল্টো জাতীয়তাবাদী মনোভাব উসকে দিতে পারে। বর্তমান সংঘাত পরিস্থিতিতে ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানের ছায়া যেন আবারও ঘনিয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থিতিশীল ভূখণ্ডে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ