ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
এসএসএফ সদস্যদের জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Scroll
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়ে আধা কিলোমিটার নিয়ে গেল বাস, নিহত ২
Scroll
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Scroll
সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন
Scroll
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ইরান কখনোই জায়নবাদীদের সঙ্গে আপস করবে না
Scroll
ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ুক— এমনটি চায় না অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক: জরিপ
Scroll
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াক, চায় না অধিকাংশ মার্কিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০:৩৮, ১৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১৬, ১৮ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াক, চায় না অধিকাংশ মার্কিনি

কোলাজ: ঢাকা এক্সপ্রেস

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ুক— এমনটি চায় না অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের একটি বড় অংশ এই সংকটে সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার ঘোর বিরোধী। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউগভ (YouGov) পরিচালিত ওই জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৬০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, চলমান এই যুদ্ধের মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীকে কোনোভাবেই জড়ানো উচিত নয়।

জরিপে দেখা গেছে, এ অবস্থানে স্পষ্টভাবে মত দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের বড় একটি অংশ। তাদের বিপরীতে মাত্র ১৬ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তারা চায় যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুক। তবে এখনো একটি উল্লেখযোগ্য অংশ— প্রায় ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি বা তাদের কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিভাজনের প্রতিফলন এই ইস্যুতেও দৃশ্যমান। ডেমোক্র্যাট দলীয় সমর্থকদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যেও বেশির ভাগ, অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ, যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। পক্ষপাতহীন বা কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন, এমন ‘স্বতন্ত্র’ আমেরিকানদের মধ্যেও প্রায় ৬১ শতাংশ এই সংঘাতে মার্কিন সেনা জড়িত হওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মনোভাব শুধু যুদ্ধের প্রশ্নেই নয়, ইরানকে ঘিরে সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিও ইঙ্গিত দেয়। এতে দেখা গেছে, অর্ধেক মার্কিন নাগরিক ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শত্রু’ হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে, আরো ২৫ শতাংশের মতে, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ, এই দুই দেশের সম্পর্কে যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি রয়েছে, তা মার্কিন সমাজের একটি বৃহৎ অংশই স্বীকার করে নিচ্ছে।

এই সমীক্ষা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও ধীরে ধীরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে। দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে এই ধারণা প্রচলিত যে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ সমর্থন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযানে নিজেদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে, তবু ইসরায়েলি সামরিক তৎপরতায় মার্কিন প্রযুক্তি, অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা ব্যবহারের তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য ও অবস্থান পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইরানের আকাশসীমার পুরো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অবস্থানও তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। আল জাজিরার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) প্রকাশিত ওই পোস্টে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি (খামেনি) একটি সহজ লক্ষ্যবস্তু, তবে নিরাপদে আছেন। আমরা তাকে হত্যা করছি না, অন্তত এখন নয়।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য শুধু বিস্ময়কর নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিতও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় না ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র বেসামরিক নাগরিক বা মার্কিন সেনাদের ওপর আঘাত হানুক। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমাদের ধৈর্য কমে আসছে।

এই বক্তব্য ও অবস্থান রাজনৈতিক মহলে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের জটিল কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা শুধু এই অঞ্চলের জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্পের এমন আক্রমণাত্মক অবস্থানকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।

তবে জনগণের স্পষ্ট অভিমত হলো, যুক্তরাষ্ট্র যেন এই যুদ্ধে সামরিকভাবে না জড়ায়। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের জটিল বাস্তবতায় সাধারণ মার্কিনিরা শান্তিপূর্ণ সমাধানকেই যেন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা চায় না, আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো বিপজ্জনকভাবে টেনে নিয়ে যাক। যুদ্ধ নয়, কূটনীতি—এটিই যেন মার্কিন জনমতের মূখ্য সুর।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন