ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
এসএসএফ সদস্যদের জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Scroll
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়ে আধা কিলোমিটার নিয়ে গেল বাস, নিহত ২
Scroll
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Scroll
সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন
Scroll
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ইরান কখনোই জায়নবাদীদের সঙ্গে আপস করবে না
Scroll
ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ুক— এমনটি চায় না অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক: জরিপ
Scroll
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সব দেশ থেকে আলাদাভাবে চলে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:৪৪, ১৭ জুন ২০২৫

সব দেশ থেকে আলাদাভাবে চলে ইরান

ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় একেবারেই আলাদা। এখানে গণতন্ত্রের কিছু কাঠামো থাকলেও চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে একজন ধর্মীয় নেতার হাতে। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানে যে শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা একাধারে ধর্মতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের মিশেল। নিচে একনজরে ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভগুলো তুলে ধরা হলো:

শীর্ষ নেতা: সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী

ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন দেশটির শীর্ষ ধর্মীয় নেতা। এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন ব্যক্তি এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন: ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এবং তার উত্তরসূরি আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে আয়াতোল্লাহ খামেনি এই পদে রয়েছেন। তিনি শুধু ধর্মীয় নেতা নন, বরং সেনাবাহিনীর প্রধান, বিচার বিভাগের প্রধানের নিয়োগদাতা, রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের সর্বময় কর্তা এবং দেশের শত শত কোটি ডলারের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়ন্ত্রক। সবশেষে, যে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত।

প্রেসিডেন্ট: দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ, কিন্তু সীমিত ক্ষমতা

প্রেসিডেন্ট ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তবে তার ক্ষমতা শীর্ষ নেতার অনুমোদনের সীমায় আবদ্ধ। প্রেসিডেন্ট জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন এবং সর্বোচ্চ দুবার টানা মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। সরকার পরিচালনা, অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতে কার্যকর ভূমিকা থাকলেও, সব সিদ্ধান্তে শীর্ষ নেতার সম্মতি অপরিহার্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা নির্ধারণ করেন গার্ডিয়ান কাউন্সিল, ফলে অনেক সময় উদারপন্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়।

পার্লামেন্ট (মজলিস): আইন প্রণয়নকারী, কিন্তু স্বাধীন নয়

২৯০ সদস্যবিশিষ্ট ইরানের পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন এবং বাজেট অনুমোদনের ক্ষমতা রাখে। তবে কোনো আইন কার্যকর হওয়ার আগে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে। এমনকি প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীদের ইমপিচ করার ক্ষমতাও রয়েছে এই মজলিসের হাতে।

গার্ডিয়ান কাউন্সিল: নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক

১২ সদস্যের গার্ডিয়ান কাউন্সিল ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। তারা প্রার্থী যাচাই, আইন যাচাই এবং সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণতা পরীক্ষা করে। ছয়জন ধর্মতাত্ত্বিক শীর্ষ নেতা দ্বারা নিয়োজিত হন, বাকিরা বিচার বিভাগের মাধ্যমে আসেন এবং পার্লামেন্টে অনুমোদিত হন। এই কাউন্সিল যেকোনো বিল ভেটো করতে পারে এবং তাদের বর্তমান নেতৃত্ব কট্টরপন্থী।

অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস: শীর্ষ নেতার নিয়ন্ত্রণে নজরদারির ক্ষমতা

এই ৮৮ সদস্যবিশিষ্ট পরিষদে রয়েছেন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা। তাদের কাজ শীর্ষ নেতাকে নিয়োগ ও তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা। যদিও এখন পর্যন্ত তারা শীর্ষ নেতার কোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেননি, তবে খামেনির বয়সজনিত কারণে ভবিষ্যতে এই পরিষদের গুরুত্ব বাড়তে পারে।

বিচার বিভাগ: শীর্ষ নেতার নিয়ন্ত্রণে

প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন শীর্ষ নেতার দ্বারা এবং ইসলামি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করেন। বর্তমান বিচারপতি ইব্রাহিম রাইসি, যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেরও একজন প্রভাবশালী প্রার্থী ছিলেন।

সামরিক শক্তি: আইআরজিসি ও বাসিজের দৌরাত্ম্য

ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী হলো ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)। এই বাহিনী কেবল সেনা নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় শক্তি। এদের অধীনে রয়েছে বাসিজ নামক আধাসামরিক বাহিনী, যারা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনেও সক্রিয়।

ভোটার ও নির্বাচন: গণতন্ত্র নাকি সীমিত অংশগ্রহণ?

ইরানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ। ভোটে অংশগ্রহণের হার সাধারণত ৫০ শতাংশের বেশি হলেও ২০২০ সালে তা নেমে যায় অনেক নিচে, মূলত জনগণের হতাশা এবং কট্টরপন্থীদের আধিপত্যের কারণে। নারীরা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কখনোই অনুমোদন পাননি।

এক্সপেডিয়েন্সি কাউন্সিল: সমঝোতার হাল

পার্লামেন্ট ও গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মধ্যে মতবিরোধ নিরসনে কাজ করে এই পরিষদ। শীর্ষ নেতার নিয়োগে ৪৫ সদস্যের এই পরিষদের ভূমিকা পরোক্ষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানে নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রয়েছে শীর্ষ ধর্মীয় নেতার হাতে। প্রেসিডেন্ট থেকে পার্লামেন্ট—সব প্রতিষ্ঠানের মাথার ওপর তিনি ছায়ার মতো বিরাজ করেন। ফলে, দেশের শাসন ব্যবস্থায় ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার এক অদ্ভুত মিশেল দেখা যায়।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন