শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৪৪, ১৭ জুন ২০২৫
ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন দেশটির শীর্ষ ধর্মীয় নেতা। এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন ব্যক্তি এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন: ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এবং তার উত্তরসূরি আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে আয়াতোল্লাহ খামেনি এই পদে রয়েছেন। তিনি শুধু ধর্মীয় নেতা নন, বরং সেনাবাহিনীর প্রধান, বিচার বিভাগের প্রধানের নিয়োগদাতা, রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের সর্বময় কর্তা এবং দেশের শত শত কোটি ডলারের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়ন্ত্রক। সবশেষে, যে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত।
প্রেসিডেন্ট ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তবে তার ক্ষমতা শীর্ষ নেতার অনুমোদনের সীমায় আবদ্ধ। প্রেসিডেন্ট জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন এবং সর্বোচ্চ দুবার টানা মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। সরকার পরিচালনা, অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতে কার্যকর ভূমিকা থাকলেও, সব সিদ্ধান্তে শীর্ষ নেতার সম্মতি অপরিহার্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা নির্ধারণ করেন গার্ডিয়ান কাউন্সিল, ফলে অনেক সময় উদারপন্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়।
২৯০ সদস্যবিশিষ্ট ইরানের পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন এবং বাজেট অনুমোদনের ক্ষমতা রাখে। তবে কোনো আইন কার্যকর হওয়ার আগে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে। এমনকি প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীদের ইমপিচ করার ক্ষমতাও রয়েছে এই মজলিসের হাতে।
১২ সদস্যের গার্ডিয়ান কাউন্সিল ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। তারা প্রার্থী যাচাই, আইন যাচাই এবং সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণতা পরীক্ষা করে। ছয়জন ধর্মতাত্ত্বিক শীর্ষ নেতা দ্বারা নিয়োজিত হন, বাকিরা বিচার বিভাগের মাধ্যমে আসেন এবং পার্লামেন্টে অনুমোদিত হন। এই কাউন্সিল যেকোনো বিল ভেটো করতে পারে এবং তাদের বর্তমান নেতৃত্ব কট্টরপন্থী।
এই ৮৮ সদস্যবিশিষ্ট পরিষদে রয়েছেন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা। তাদের কাজ শীর্ষ নেতাকে নিয়োগ ও তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা। যদিও এখন পর্যন্ত তারা শীর্ষ নেতার কোনো সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেননি, তবে খামেনির বয়সজনিত কারণে ভবিষ্যতে এই পরিষদের গুরুত্ব বাড়তে পারে।
প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন শীর্ষ নেতার দ্বারা এবং ইসলামি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করেন। বর্তমান বিচারপতি ইব্রাহিম রাইসি, যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেরও একজন প্রভাবশালী প্রার্থী ছিলেন।
ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী হলো ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)। এই বাহিনী কেবল সেনা নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় শক্তি। এদের অধীনে রয়েছে বাসিজ নামক আধাসামরিক বাহিনী, যারা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনেও সক্রিয়।
ইরানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ। ভোটে অংশগ্রহণের হার সাধারণত ৫০ শতাংশের বেশি হলেও ২০২০ সালে তা নেমে যায় অনেক নিচে, মূলত জনগণের হতাশা এবং কট্টরপন্থীদের আধিপত্যের কারণে। নারীরা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কখনোই অনুমোদন পাননি।
পার্লামেন্ট ও গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মধ্যে মতবিরোধ নিরসনে কাজ করে এই পরিষদ। শীর্ষ নেতার নিয়োগে ৪৫ সদস্যের এই পরিষদের ভূমিকা পরোক্ষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ।
ইরানে নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রয়েছে শীর্ষ ধর্মীয় নেতার হাতে। প্রেসিডেন্ট থেকে পার্লামেন্ট—সব প্রতিষ্ঠানের মাথার ওপর তিনি ছায়ার মতো বিরাজ করেন। ফলে, দেশের শাসন ব্যবস্থায় ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার এক অদ্ভুত মিশেল দেখা যায়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ