শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:১৯, ১৭ জুন ২০২৫
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের আর্থিক সক্ষমতার পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি এর প্রাকৃতিক সম্পদ। ২০২১ সালের মার্কিন তথ্য অনুযায়ী, গ্যাসের মজুদে বিশ্বে দ্বিতীয় এবং তেলের মজুদে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরান। অর্থাৎ, জ্বালানি সম্পদে একেবারেই শীর্ষ সারির দেশগুলোর একটি।
এছাড়া ইরান লাগোয়া হরমুজ প্রণালী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত এ অংশ দিয়ে বিশ্বের ২১ শতাংশ তেলের সরবরাহ হয়। মজার বিষয় হলো ইরানের জ্বালানি কেন্দ্র করে নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খোদ আমেরিকাও তাদের জ্বালানি কেনে। মাঝে ১০ বছর পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও গত চার বছরে কিছু তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য কিনেছে তারা, যেটা প্রকাশ করেছে আমেরিকাই।
জ্বালানি তো বটেই, এর বাইরেও নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ইরান। বিশ্বে বাণিজ্যে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ইরানের আপেল, গম, যব, কমলা, আখ, আলু, পোল্ট্রি বা সবজির মতো পণ্য রয়েছে, এছাড়া অস্ত্র, সিমেন্ট, রাসায়নিক পদার্থ, নির্মাণ সামগ্রী, সার, ধাতব পণ্য, টেক্সটাইলের মতো অনেক ধরনের পণ্য রয়েছে, এবং বড় যুদ্ধ বাঁধলে সেসব খাতে বিশ্ববাজারে একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে তারা (তথ্য – গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার)।
বাংলাদেশেও ইরানের আতর, রত্নপাথর বা জাফরানের মতো পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া পারস্য সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস ইরানের পণ্যকে বিশ্বব্যাপী আলাদা একটা নামডাকের জায়গা দিয়েছে। আমেরিকা যে ইরানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে তা সত্ত্বেও সেখানে ইরানের কার্পেট, কারুপণ্য ও হস্তশিল্প পাওয়া যায়।
আনঅফিসিয়াল বাণিজ্যের মাধ্যমে বার্টার, হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক বাজারও ধরে রেখেছে ইরান যেখানে বড় ক্রেতা হিসেবে আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, চীন, রাশিয়ার মতো দেশ রয়েছে।
ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানও রয়েছে যেটা এশিয়ার সাথে মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য উপসাগর এবং ইউরোপের সংযোগ তৈরি করে। অনেক ইরানি বিশ্লেষক মনে করেন নিষেধাজ্ঞায় জনগণের উপরে বড় ধাক্কা আসলেও সেসব নিষেধাজ্ঞাই ইরানকে স্বনির্ভর হতে, নিজেদের উন্নতিতে বিকল্প পথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
এছাড়া ইরানের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সমৃদ্ধ করতে নেতৃত্বের একটা বড় প্রভাবের কথাও আসে। খামেনির একনায়কতন্ত্রটা দেশের জনগণ অতটা ভালোভাবে না নিলেও তারা এটা স্বীকার করে যে দেশের স্বার্থে, বিশেষত পশ্চিমা শক্তিকে পাল্লা দিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব ধরে রাখতে আয়াতোল্লাহ খামেনির যে নেতৃত্ব এবং সাহস সেটা বড় ভূমিকা পালন করে।
এমন অনেক কিছুর সমন্বয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করে গেছে ইরান। গড়ে তুলেছে বিস্তৃত এক প্রক্সি নেটওয়ার্ক। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানে বের হয়ে আসার মতো কোনও আলামত তো নেই, বরং বড়সড় যুদ্ধে জড়ালে আরও কিছু নতুন বাস্তবতার মুখেই পড়তে যাচ্ছে তারা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ