শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৩৭, ১৮ জুন ২০২৫
ইরান-ইসরায়েল টানাপড়েন এখন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু এই উত্তপ্ত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রায় উপেক্ষিত রয়ে গেছে ইরানে বসবাসরত ইহুদিদের জীবন, উদ্বেগ ও ভবিষ্যৎ।
ইরানে ইহুদিদের বসবাসের ইতিহাস প্রায় ২ হাজার ৭০০ বছরের পুরোনো। ধারণা করা হয়, পারস্য সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এই অঞ্চলে ইহুদিদের অস্তিত্ব রয়েছে। বর্তমানে ইরানে ১৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার ইহুদি বাস করছেন, যাঁদের অধিকাংশ তেহরান, ইস্পাহান, শিরাজ, হামেদান ও তাবরিজে কেন্দ্রীভূত।
তেহরানে অন্তত ৫০টি সিনাগগ রয়েছে, রয়েছে ইহুদিদের পরিচালিত হাসপাতালও। ইস্পাহানের বিখ্যাত আল-আকসা মসজিদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সিনাগগ—যা ইরানে ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
ইরানের পার্লামেন্ট ‘মজলিশে’ ইহুদিদের জন্য একটি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে বিরল নজির। দেশটির প্রবীণ ইহুদি নেতা ও আবরিশামি সিনাগগের রাব্বি ইয়োনেস হামামি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা পারস্য সাম্রাজ্যের সময় থেকে এখানে আছি। আমাদের ইতিহাস এই ভূমির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।”
ইতিহাসে ইরান বহুবার ইহুদিদের আশ্রয় দিয়েছে। স্পেনের ধর্মীয় নিপীড়নের সময় বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনী থেকে পালিয়ে বহু ইহুদি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন তেহরানে।
তবে সব সময় ইরানি ইতিহাস ইহুদিদের পক্ষে ছিল না। সাফাভি ও কাজার আমলে বহু ইহুদিকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা হয়। আর ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব ইরানি ইহুদিদের জন্য এক নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করে—তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
ইসরায়েলের বিমান হামলায় যখন ইরান অস্থির, তখন ইহুদি নাগরিকরা পড়ে গেছেন নতুন এক অনিশ্চয়তায়। তারা নিজেদের দেশ ইরানের প্রতি অনুগত হলেও, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
তেহরানে বসবাসরত অনেক ইহুদি এখন বিদেশে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকে ভাবছেন, যদি সংঘাত আরও বাড়ে, তাহলে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে?
ইসরায়েল যখন বলে, ‘সব ইহুদি আমাদের নাগরিক’, তখন ইরানি ইহুদিরা নিজেদের পরিচয় দ্বিধার মুখে পড়তে বাধ্য হন—তাঁরা কি প্রথমে ইহুদি, না ইরানি? বর্তমান সংকটে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাঁরা নিজেরাও।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ