শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:৩৭, ১৮ জুন ২০২৫
‘ফাত্তাহ’—ফার্সি শব্দ যার অর্থ ‘বিজয়ী’ বা ‘উন্মোচনকারী’। এটি ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)-এর তৈরি প্রথম হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। একধাপে চালিত এই ক্ষেপণাস্ত্রটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার এবং এটি বহন করতে পারে প্রায় ২০০ কেজি বিস্ফোরক। এর পাল্লা প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার, এবং এটি চলে কঠিন জ্বালানিতে। কিন্তু যা একে সত্যিই ভয়ঙ্কর করে তোলে তা হলো—এর মাক-৫ গতিতে ছুটে চলা, অর্থাৎ ঘণ্টায় ৬,১০০ কিলোমিটার!
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ফাত্তাহ-১ হাইপারসনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আকাশপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে, ফলে এটি সহজে রাডার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধরা পড়ে না। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই গতিপথ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাই একে ‘প্রতিরোধ অযোগ্য’ করে তোলে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির পেছনে অন্যতম প্রভাবশালী নাম হাসান তেহরানি মোঘদাম—ইরানের ‘মিসাইল আর্কিটেক্ট’। তাঁর স্মরণে, ২০২২ সালে IRGC জানায় তারা একটি উন্নত হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। এরপর ২০২৩ সালের জুনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই নিজ হাতে এর নাম দেন—‘ফাত্তাহ’। তেহরানের ভাষায়, এটি “প্রজন্মগত শক্তি”—যা ইরানকে শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিকভাবে সামরিক সক্ষমতায় অন্য এক স্তরে নিয়ে গেছে।
বুধবারের হামলায় এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবার সরাসরি ব্যবহারের স্বীকৃতি পেলেও, গোপন সূত্রগুলো জানায়—২০২৪ সালের ১ অক্টোবর, জেরুজালেমে হামলার সময়ও এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। এবার এই অস্ত্রের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোনের সমন্বিত হামলা কৌশল, যা ‘ন্যায়বিচার প্রতিশোধ অভিযান’-এর অংশ বলে জানিয়েছে ইরান।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ডেড সি অঞ্চলে তারা দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে তারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি, যা এই অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে আরও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।
ইরানের হামলার পাল্টা জবাবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের আঘাতে ইরানি কোর কমান্ডার আলি শাদমানি এবং তাঁর পূর্বসূরি গোলাম আলি রাশিদ নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে তেহরানে বহু বেসামরিক হতাহতের খবর মিলেছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেই বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতি দয়া দেখানোর আর সুযোগ নেই।’
এর পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “আমরা জানি খামেনেই কোথায় লুকিয়ে আছে। সে একটি সহজ লক্ষ্য।”
বিশ্লেষকদের মতে, ফাত্তাহ-১ শুধুই একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয়, বরং এটি ইরানের পক্ষ থেকে এক কৌশলগত বার্তা—যাতে তারা বুঝিয়ে দিতে চায়, তারা প্রতিরোধ নয়, আক্রমণের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ করেছে। তবে, কিছু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ফাত্তাহ-১কে ‘আসল’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বলতে নারাজ। তাঁদের মতে, প্রচলিত অনেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও লক্ষ্যবস্তুতে নামার সময় হাইপারসনিক গতি অর্জন করে। কিন্তু ফাত্তাহ-১-এর মূল শক্তি এর দিক পরিবর্তনের সক্ষমতা ও দ্রুত মোতায়েনযোগ্যতা।
মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতির মাঝে ফাত্তাহ-১ এর মতো অস্ত্রের ব্যবহার শুধু সংঘাতের মাত্রা নয়, আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। যদি এই প্রযুক্তি সত্যিই যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর হয়, তবে এটি ইসরায়েল, সৌদি আরব, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাতেও নতুন করে ভাবনা যুক্ত করবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ