ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

রাস্তায় গাড়ির স্রোত, ঘরে কান্না—তেহরানবাসী কোথায় যাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৪৬, ১৭ জুন ২০২৫

রাস্তায় গাড়ির স্রোত, ঘরে কান্না—তেহরানবাসী কোথায় যাবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কবার্তায় ইরানের রাজধানী তেহরানে ছড়িয়ে পড়েছে ভীতি, উদ্বেগ ও ক্ষোভ। শহর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকেই। মূল সড়কগুলোতে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ জটলা। তবে এ অবস্থায় অসুস্থ স্বজনদের নিয়ে শহর ছাড়তে না পারা কিংবা গন্তব্যহীন মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভও দানা বেঁধেছে।

আজ (মঙ্গলবার) বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তেহরানের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আজ শহরটা অস্বাভাবিকভাবে ফাঁকা মনে হলো। তবু জানি, অনেকে এখনো তেহরানে রয়ে গেছেন—যাঁদের যাওয়ার উপায় নেই।’ তিনি জানান, ট্রাম্পের বার্তার পর থেকেই শহর ছাড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। কেউ গতকালই বেরিয়ে পড়েছেন, আবার অনেকে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে রওনা হয়েছেন।

তবে সবাই যে এই মুহূর্তে শহর ছাড়ার মতো অবস্থায় আছেন, তা নয়। এক বাসিন্দা বলেন, “আমার দাদা কিডনিরোগী, বয়স ৯০ ছাড়িয়েছে। দাদি সদ্য হাঁটুর অপারেশন করিয়েছেন। তাঁদের নিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই তেহরানে থেকে গেছি—যাতে প্রয়োজনে পাশে থাকতে পারি।”

তেহরান ছেড়ে যাওয়ার মানে অনেকের জন্যই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া। কারণ, গ্রামাঞ্চলে ওষুধ কিংবা হাসপাতাল সেভাবে সহজলভ্য নয়। তাই কেউ কেউ রয়ে যাচ্ছেন জীবন ও মৃত্যুর অনিশ্চয়তার মাঝেই।

আরেকজন বলেন, “আমার আশপাশের অনেকেই চলে গেছে। কিন্তু আমি কোথায় যাব? এই শহরেই আমার জীবনের সবকিছু। এটাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না।”

তবে শহর ছাড়াদের সহায়তায় অনেক গ্রামবাসী এগিয়ে এসেছেন। কেউ আশ্রয় দিয়েছেন নিজের ঘরে, কেউবা নিজ গাড়িতে করে অন্যদের পৌঁছে দিয়েছেন নিরাপদ স্থানে। কিন্তু এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

এই সংকটময় সময়ে অনেকে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ইসলামি প্রজাতন্ত্র যদি জনগণের জীবনের প্রতি সামান্য গুরুত্ব দিত, তবে অন্তত কোনো রকম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসত। এখন দরিদ্র মানুষজনকে বাধ্য হয়ে নিজের ব্যবস্থায় শহর ছাড়তে হচ্ছে।”

অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও তেহরান ছাড়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তারা এই পরিস্থিতিকে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ ও ‘শত্রুর মিথ্যা প্রচারণা’ বলে দাবি করছে। সরকারপন্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরাও একই কথা বলছেন—তাঁদের ভাষায়, ‘তেহরান এখনো নিরাপদ’। যদিও বাস্তবে শহরটিতে ইসরায়েলের হামলা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট বার্তা বা সহায়তা ছাড়া রাজধানীবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়বে এবং অনিয়ন্ত্রিত অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু প্রবাহ তৈরি হতে পারে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন