ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ইসরায়েল যেভাবে সর্বদিকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বানিয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৩৩, ১৭ জুন ২০২৫

ইসরায়েল যেভাবে সর্বদিকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বানিয়েছে

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝে একটি ছোট্ট রাষ্ট্র ইসরায়েল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটেন ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার পর ইহুদিরা নিজেদের জন্য রাষ্ট্র ঘোষণা করে — যার নাম ইসরায়েল। এরপর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। কেবল টিকে থাকাই নয়, বরং সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই দেশ। আরব শত্রু পরিবেষ্টিত অবস্থায়ও ইসরায়েল আজ পরমাণু শক্তিধর একটি রাষ্ট্র।

ইসরায়েলের শক্তির পেছনে কে?

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের শক্তির পেছনে রয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সুদৃঢ় সমর্থন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার বৈদেশিক সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশ পেয়েছে ইসরায়েল। রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার দিনেই একে স্বীকৃতি দেয় আমেরিকা। এরপর থেকে প্রতিটি সামরিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের একাংশ সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের পাশে থেকেছে।

শত্রু দিয়ে ঘেরা, তবু অগ্রসর

মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন — প্রতিবেশী প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গেই যুদ্ধ করেছে ইসরায়েল। ১৯৪৮, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের প্রধান যুদ্ধ ছাড়াও অনেক ছোটখাটো সংঘাতে লিপ্ত থেকেছে তারা। কিন্তু প্রতিটি সংঘাত ইসরায়েলকে আরও সংগঠিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চাপ ও হুমকি মোকাবেলার মধ্যে দিয়েই ইসরায়েল সামরিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে নিজেদেরকে দ্রুত আধুনিক করে তুলেছে। বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা, উন্নত গোয়েন্দা প্রযুক্তি, সাইবার সক্ষমতা এবং আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থার বিকাশ তাদের প্রতিরক্ষা খাতকে তুলেছে শীর্ষে।

একটি পারমাণবিক প্রতিরক্ষা

ষাটের দশকে ফ্রান্সের সহায়তায় গোপনে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করে ইসরায়েল। যদিও তারা কখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, তথাপি আন্তর্জাতিক মহলে দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকা ও ব্রিটেন, ইসরায়েলের এই কর্মসূচির ব্যাপারে নীরব থেকেছে বলে দাবি করে আসছে বহু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা।

প্রযুক্তির ‘স্টার্ট আপ নেশন’

“স্টার্ট আপ নেশন” নামে পরিচিত ইসরায়েল প্রযুক্তি খাতে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে লাখেরও বেশি স্টার্টআপ রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই সামরিক ও নিরাপত্তা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট। উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি, মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ও সাইবার গোয়েন্দা ব্যবস্থায় দেশটি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ২০২৩ অর্থবছরেই ইসরায়েলকে মিসাইল উন্নয়নে সহায়তার জন্য ৫০ কোটি ডলারের বরাদ্দ দেয় মার্কিন কংগ্রেস।

কৃষি ও পানির চমক

মরুভূমিতে পানি ও উর্বরতার অভাব সত্ত্বেও ইসরায়েল আজ বিশ্বে কৃষি প্রযুক্তির অন্যতম উদ্ভাবক দেশ। অত্যাধুনিক সেচ প্রযুক্তি এবং ফুড প্রসেসিং শিল্পে তারা দেখিয়েছে অসাধারণ সাফল্য। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে ২০২০ সালে দেশটি আয় করেছে ১৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

জ্ঞান, নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতা

ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই ছিলেন ইউরোপের উচ্চশিক্ষিত ইহুদি পণ্ডিত ও বিজ্ঞানী। এই গোষ্ঠী শুধু একটি দেশই প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং গড়ে তুলেছেন একটি গবেষণাভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিকল্পিত রাষ্ট্র। তাদের নেতৃত্ব সবসময় দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, সামরিক থেকে কূটনীতি — সব ক্ষেত্রেই কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল সুস্পষ্ট।

সমালোচনার তোয়াক্কা নেই

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন অমান্যের অভিযোগ নিয়মিত উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। পশ্চিমাদের নীরব সমর্থনও বহুবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গবেষক বুশরা নূর ওযঘুলার আকতেলের মতে, “শক্তিধর রাষ্ট্র গঠনের এই যাত্রায় মানবিক মূল্য অনেক বেশি।”

শেষ কথা

ইসরায়েল একদিকে প্রযুক্তির ‘স্টার্ট আপ নেশন’, অন্যদিকে বিতর্কিত দখলদার রাষ্ট্র। তবে কোনো সন্দেহ নেই, ঘেরাও পরিস্থিতি ও শত্রু পরিবেষ্টিত অবস্থানেও একটি রাষ্ট্র কিভাবে বহুমাত্রিক শক্তিতে রূপ নিতে পারে — ইসরায়েল তার এক অনন্য উদাহরণ।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন