শিরোনাম
মোহাম্মদ জাকির হোসেন, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ১৪:১৭, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৫১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
সংরক্ষণের অভাবে পড়ে আছে আলুবীজ । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিএডিসির আলু বীজ হিমাগারে জায়গা না পেয়ে হতাশায় ভূগছেন কৃষক। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে শেড তৈরি করে সেখানে সংরক্ষণ করছেন বীজ আলু। যা কিছু দিনের মধ্যে পচন ধরবে। এসব এখন খাওয়ার আলু হিসেবে বিক্রির অপেক্ষায় কৃষকের বাড়িতে পড়ে আছে।
এবারের আবহাওয়া ভালো হওয়া সত্বেও; বাম্পার ফলনেও লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষককে। উৎপাদন মৌসুমে প্রতি মণ আলু ৭৫০থেকে ৮০০টাকা থাকলেও, এখন বাজার মূল্য কমে ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে কৃষকদের আলু চাষে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এ এলাকায় সাধারণত: উচ্চ ফলনশীল জাতের ডায়মন্ড ও এস্টারিক আলু চাষ করা হয়। যা হিমাগারে সময়মত সংরক্ষণ না করলে কয়েক দিন পরেই আলুতে পঁচন ধরে যায়। গত ফেব্রয়ারি মাসের শেষের দিকে এ আলু জমি থেকে তোলা হলেও অধিকাংশ আলুই অবিক্রিত রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর আওতাধীন বিএডিসি আলু বীজ অফিস সূত্রে জানা যায়; এ বছর ২৪৮ একর জমিতে আলু চাষ করা হয়। এর মধ্যে হোসেনপুর আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের চর জামাইল ব্লকেই বিএডিসির শতাধিক কৃষক ৭০ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। হোসেনপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর এ উপজেলাতেই প্রায় ১ হাজার ১২ একর জমিতে প্রায় ১০ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) চর জামাইল এলাকার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ওই এলাকার কৃষক মজিবুর রহমানের সাথে। তিনি এ এলাকার সবচেয়ে বড় কৃষক। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় আলুর বিশাল স্তুপ।
তিনি বলেন, ২৪ একর জমিতে আলু চাষ করে ২৬ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে বিএডিসির ১৩ লাখ টাকার লোন (ঋণ) রয়েছে; বাকী অর্ধেক টাকা তিনি নিজে বিনিয়োগ করেছেন। উৎপাদিত আলুর বীজের গুণগত মান ভালো থাকা সত্বেও হিমাগারে ১৫০ বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য ১৪ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে পাকুন্দিয়া এগারোসিন্দুর কোল্ডস্টোরেজে প্রেরণ করেন। সেখানে আলু রাখার জায়গা না পাওয়ায় তা ফেরত পাঠায়।
বিএডিসির অধীনে আলু চাষ করে থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে বীজ আলু না নিয়ে ২ থেকে ৩ হাজার পাইকার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে বস্তা প্রতি ৩০০টাকা অগ্রিম জামানত নিয়ে আগেই হিমাগার ব্লক করে ফেলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ রকম অভিযোগে ইতিপূর্বে পাকুন্দিয়া এগারোসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিউজ হলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন টনক নড়ে নাই।
জানা যায়, পাইকাররা মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার আলু কিনে এ এলাকার কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের করেন। যে কারণে স্থানীয় কৃষকরা কোনো আলু রাখতে পারেনি সেখানে। তাদের উৎপাদিত বীজ আলু বাড়ির আঙিনায় টিনের ছেলা ও ত্রিপল টাঙ্গিয়ে খাওয়ার আলু হিসেবে বিক্রির আশায় অপেক্ষা করছেন।
চর জামাইল এলাকার আলু চাষি ফখরুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল, আবুল হাসেন, আনারুল ইসলাম, আবুল বাশার, মো.রাজিব মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হামিদ, মশিউর রহমান,মো.মজিবুর রহমান,সৃজন মিয়ার মত শতাধিক কৃষকদের উৎপাদিত প্রায় কয়েকশ মন আলু লাভের আশায় এখন খোলা আকাশের নিচে স্তুপ করে রেখেছেন।
এ অঞ্চলের কৃষকদের দাবী জেলার প্রায় অর্ধেক আলু আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় উৎপাদন হলেও আলু সংরক্ষণে নির্দিষ্ট কোন হিমাগার না থাকায় প্রতিবছরই লোকসান গুণতে হয়। যে জন্য তারা সরকারের কাছে জোর দাবী রাখেন; হোসেনপুরে সরকারিভাবে যেন একটি হিমাগার স্থাপন করা হয়।
হোসেনপুর কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ফেরদৌস আলম বলেন, সরকারি হিমাগারে এ বছর কৃষকরা কোনো আলু রাখতে না পারায় কৃষকদের আলু কিছুদিনের মধ্যেই পচন ধরবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কুষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির বলেন, এ এলাকার জন্য কমপক্ষে ৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ ধারণ ক্ষমতার একটি হিমাগার প্রয়োজন।
বিএডিসি আলু উপ-পরিচালক পাকুন্দিয়া হিমাগারের উপ-পরিচালক মো.হারুন অর রশিদ হিমাগারে আলু সংরক্ষণে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বতভোগীদের আলু সংরক্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা সব সময়ই আমাদের তালিকাভুক্ত চাষীদের কাছ থেকে আলু সংরক্ষণ করে থাকি।
কৃষকদের আলু হিমাগারে দিতে না পারার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, এ বিষযে যদি কেহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ