ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

বাড়ি ভাঙচুর করে সাংবাদিক অপহরণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯:০৭, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৩৩, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

বাড়ি ভাঙচুর করে সাংবাদিক অপহরণ

নোয়াখালী চাটখিল উপজেলা প্লেস ক্লাবের সদস্য, দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার সাংবাদিক জুয়েল খালেদকে অপহরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সাংবাদিকের চাটখিলের ভাড়া বাসায় গত রবিবার সন্ধ্যায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীরা জুয়েলকে অপহরণ করে চাটখিল বাজারে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে এবং একটি সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে সোমবার ভোররাতে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে। জুয়েল তার ব্যবসা ও সাংবাদিকতার কারণে পরিবার নিয়ে চাটখিলে বাসা ভাড়া করে বসবাস করছিলেন। তিনি বৈকণ্ঠপুর গ্রামের আমির হোসেন মাস্টারের ছেলে। এই ঘটনার পর এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, চাটখিলের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী এলাকা রামনারায়পুর ও খিলপাড়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৮ থেকে ১০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এখানে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিভিন্ন মামলায় মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি রয়েছে। এরা প্রকাশ্যে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। এলাকায় এদের কয়েকজন গডফাদারও রয়েছে, যাদের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণে এই কিশোর গ্যাং ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

এই গ্যাংয়ের সদস্যরা ১০/১২ জন করে কয়েকটি গ্রুপে দিনে ও রাতে মহড়া দেয়। তারা সাংবাদিক জুয়েলের চাটখিলের বাসা লুটপাট করে, তাকে বাজারের উপরে হামলা করে এবং সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যায়। অনেক পরে তার গ্রামের বাড়ি বৈকুণ্ঠপুরে নিয়ে এসে লোকজনের সামনে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। এরপর তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে নিয়ে বেঁধে রাখে দূবৃত্তরা। 

এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে যৌথ বাহিনী এলাকায় অভিযান শুরু করে এবং ভোররাতে তার সন্ধান পায়। সেনা ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, এই এলাকায় ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হন বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের সজিব এবং রামনারায়নপুর গ্রামের ডোলবাড়ীর হারুন ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই দুটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও থানা পুলিশ আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান, শ্রীপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ীর আহসান হাবিব বাবু মোল্লা, দিপু মোল্লা, ডাঃ তৌহিদ, আবুল কাশেম মেম্বার, দক্ষিণ দেলিয়াই গ্রামের হাদা বাড়ীর ভ্যানচালক বাবুলের ঘর এবং বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মেহরাব হোসেন হৃদয়ের ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হৃদয়ের ঘরের ৩ নারী এবং শিংবাহড়া সাদি মোল্লা বাড়ীর বয়োবৃদ্ধ রুহুল আমিন (৬০) হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এলাকায় নীরব চাঁদাবাজি চলছে। কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে অনেকে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নির্যাতনের ভয়ে কেউ এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অভিযোগ করেন না।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী জানান, এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। খিলপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ব্যাপক তৎপরতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
 

আরও পড়ুন