ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
এসএসএফ সদস্যদের জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Scroll
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়ে আধা কিলোমিটার নিয়ে গেল বাস, নিহত ২
Scroll
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Scroll
সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন
Scroll
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ইরান কখনোই জায়নবাদীদের সঙ্গে আপস করবে না
Scroll
ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ুক— এমনটি চায় না অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক: জরিপ
Scroll
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ভাসমান নৌকায় নাতিকে বুকে চেপে বাঁচার লড়াই আম্বিয়ার

জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ: ২১:১৬, ১৭ জুন ২০২৫

ভাসমান নৌকায় নাতিকে বুকে চেপে বাঁচার লড়াই আম্বিয়ার

রাত গভীর হলে যখন আশেপাশের ঘরবাড়িতে আলো নিভে যায়, তখনও জেগে থাকেন আম্বিয়া খাতুন। নৌকার বাঁশের ছাউনি দিয়ে ছোট্ট নাতিকে ঢেকে দেন, যেন বাতাসে তার সর্দি না হয়। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, চোখে কাঁপা কাঁপা দৃষ্টি, তবুও একরাশ মায়া নিয়ে বলেন, ‘ওই আমার দুনিয়া।’

একটা নৌকা—এটাই তার বাড়ি, সংসার আর জীবনের ঠিকানা। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, এখন পাশে কেবল পাঁচ বছরের নাতি। দিন চলে যায় মেঘনায় জাল ফেলে। ভাগ্যে যদি দু’একটা ইলিশ ওঠে, সেগুলো বিক্রি করে চাল-ডাল কেনেন। না পেলে দিন কাটে খালি পেটে।

ভোলার কালিগঞ্জে জন্ম আম্বিয়ার। নদী তার ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে বহু বছর আগে। তারপর ভেসে এসেছিলেন লক্ষ্মীপুরের মতিরহাট ঘাটে। এখানেই কেটেছে তার দুই যুগ। কিন্তু এতদিনেও জোটেনি একটি সরকারি সাহায্য—না বিধবা ভাতা, না জেলে কার্ড, না বিজিএফ চাল।

তিনি বলেন, ‘অনেকবার বলছি, একটা কার্ড দিলেই একটু স্বস্তিতে বাঁচি। বলে এনআইডি নাই। এবার নিজে খরচ করে পরিচয়পত্র করেছি। যদি সরকার একটা বিধবা কার্ড দেয়, তাহলে অন্তত নাতিটা খালি পেটে থাকবে না।’

ভাঙা গলাতেও তার কণ্ঠে ছিল না অভিমান, ছিল কেবল অনুরোধ—একটি কার্ড, একটি স্বীকৃতি, একটু সহানুভূতি।

চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়েফ উল্লাহ বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন পরিচয়পত্র ছাড়া ছিলেন। এখন এনআইডি করেছেন, বিধবা ভাতার কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

আম্বিয়া খাতুনের মতো আরও প্রায় ২০টি পরিবার ভেসে আছে মতিরহাট ঘাটে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তারা কাঁপে, সরকারি সহানুভূতিহীনতায় তারা জর্জরিত।

তবু এইসব মানুষের চোখে এখনও একফোঁটা আশা জ্বলজ্বলে। তারা জানে, হয়তো কোনো একদিন সরকারের দৃষ্টি তাদের দিকেও পড়বে। হয়তো কোনো জনপ্রতিনিধি একবার ফিরে তাকাবেন। সেই অপেক্ষায় মেঘনার বুকেই রাত কাটে আম্বিয়া খাতুনের, নাতিকে বুকে চেপে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ

আরও পড়ুন