শিরোনাম
জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ: ২১:১৬, ১৭ জুন ২০২৫
একটা নৌকা—এটাই তার বাড়ি, সংসার আর জীবনের ঠিকানা। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, এখন পাশে কেবল পাঁচ বছরের নাতি। দিন চলে যায় মেঘনায় জাল ফেলে। ভাগ্যে যদি দু’একটা ইলিশ ওঠে, সেগুলো বিক্রি করে চাল-ডাল কেনেন। না পেলে দিন কাটে খালি পেটে।
ভোলার কালিগঞ্জে জন্ম আম্বিয়ার। নদী তার ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে বহু বছর আগে। তারপর ভেসে এসেছিলেন লক্ষ্মীপুরের মতিরহাট ঘাটে। এখানেই কেটেছে তার দুই যুগ। কিন্তু এতদিনেও জোটেনি একটি সরকারি সাহায্য—না বিধবা ভাতা, না জেলে কার্ড, না বিজিএফ চাল।
তিনি বলেন, ‘অনেকবার বলছি, একটা কার্ড দিলেই একটু স্বস্তিতে বাঁচি। বলে এনআইডি নাই। এবার নিজে খরচ করে পরিচয়পত্র করেছি। যদি সরকার একটা বিধবা কার্ড দেয়, তাহলে অন্তত নাতিটা খালি পেটে থাকবে না।’
ভাঙা গলাতেও তার কণ্ঠে ছিল না অভিমান, ছিল কেবল অনুরোধ—একটি কার্ড, একটি স্বীকৃতি, একটু সহানুভূতি।
চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়েফ উল্লাহ বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন পরিচয়পত্র ছাড়া ছিলেন। এখন এনআইডি করেছেন, বিধবা ভাতার কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
আম্বিয়া খাতুনের মতো আরও প্রায় ২০টি পরিবার ভেসে আছে মতিরহাট ঘাটে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তারা কাঁপে, সরকারি সহানুভূতিহীনতায় তারা জর্জরিত।
তবু এইসব মানুষের চোখে এখনও একফোঁটা আশা জ্বলজ্বলে। তারা জানে, হয়তো কোনো একদিন সরকারের দৃষ্টি তাদের দিকেও পড়বে। হয়তো কোনো জনপ্রতিনিধি একবার ফিরে তাকাবেন। সেই অপেক্ষায় মেঘনার বুকেই রাত কাটে আম্বিয়া খাতুনের, নাতিকে বুকে চেপে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ