শিরোনাম
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫:২৮, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
বাবা-মায়ের সঙ্গে আন্দোলনে চোখ হারানো মাহবুব। ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে দুই চোখ হারানো মাহবুব আলম এবার হারালেন স্ত্রীকেও। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে চলে গেছেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় চোখে গুলিবিদ্ধ হন মাহবুব আলম (২৯)। আঘাতে তার চোখের নার্ভ ছিঁড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বাঁ চোখের পর্দাও ফেটে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত আর দেখতে পাবেন না তিনি। জার্মানি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে উন্নত চিকিৎসায় তার চোখের আলো ফেরানো সম্ভব। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েনে সেদিকে আর পা বাড়াতে পারেনি পরিবার। এমন অবস্থার মধ্য দিয়েই দিন পার হচ্ছিল মাহবুব আলমের।
এরই মধ্যে গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করা স্ত্রী নাফিজা ইসলাম (১৯) সংসার ছেড়ে চলে যায়। সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল স্ত্রীর পক্ষ থেকে ডিভোর্স লেটার পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ এপ্রিল পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমেই বিচ্ছেদ ঘটানো হয়।
মাহবুব বলেন, “আমার বিষয়টি মানবিক হওয়ার পাশাপাশি বাস্তবতাও রয়েছে। আমার স্ত্রী বাস্তবতার বিষয়টি চিন্তা করেই হয়ত চলে গেছেন। যেহেতু তিনি চলে গেছেন, দেনমোহর তার প্রাপ্য। পারিবারিকভাবে আলোচনার মাধ্যমেই দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তার অধিকার। অন্যথায় তার কাছে আমি ঋণী থাকতাম। তিনি সুখী হোক সেই দোয়া করি। এ বিষয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নেই আমার।”
জানা গেছে, টাকার অভাবে চিকিৎসা আটকে টাকা মাহবুব আলম জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত ২ লাখ টাকাসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ দিতে বাধ্য হয়। সেই সাথে হাতে থাকা চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল এবং হাতে থাকা পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের আংটি জোর পূর্বক নিয়ে যায়। যা উপস্থিত সকলকে হতবিহ্বল করে তোলে।
মাহবুবের মা হালিমা বেগম বলেন, “ছেলের চোখ বাঁচাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে তার চিকিৎসা চলে থাইল্যান্ডে। ১৭ দিন সেখানে অবস্থানের পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন তারা। ওই সময় চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, মাহবুবের চোখের আলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
তিনি আরও বলেন, তার এই অবস্থার মধ্যে স্ত্রী চলে যাওয়াটা কষ্টকর। সে তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতো। তার স্ত্রী চলে গেলে আমরা তাকে আটকাতাম না। কিন্তু এই সময়ে চলে যাওয়ার কষ্ট হয়ত আমার ছেলেটা নিতে পারবে না। আমি মা হয়ে তার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা অনেকটা চাপ দিয়েই দেনমোহরের টাকাসহ মেয়েকে নিয়ে গেছে।
মাহবুবের বাবা মশিউর রহমানও বেশ অসুস্থ। তিনি বলেন, “সন্তান ভবিষ্যতে মা-বাবাকে পথ দেখিয়ে চালাবে, কিন্তু সেই সন্তানকেই মা-বাবার হাত ধরে চলতে হয়। এরই মধ্যে মাহবুবের চিকিৎসায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করা হলেও চোখের আলো ফেরেনি। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানিতে নিতে পারলে মাহবুবের চোখের আলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। এই সময়ে তার স্ত্রী চলে যাওয়ার কষ্ট হয়ত সে মেনে নিতে পারছে না।
ঢাকা এক্সপ্রেস/এনএ