শিরোনাম
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১:৪৮, ১ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২১:৫১, ১ জুন ২০২৫
ভারী বর্ষণে ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার বিভিন্ন সড়ক। ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
রোববার সকালে প্রবল বৃষ্টিতে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় কাউখালী-ঘিলাছড়ি সংযোগ সড়ক ধসে পড়ে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকায় বসবাসরতরা চরম বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া, কাউখালী উপজেলার কলাবাগান এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর পাহাড়ধসের মাটি পড়ায় সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে সড়ক বিভাগের তড়িৎ কার্যক্রমের ফলে কিছুক্ষণ পরই যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কাউখালী খাল এবং ইছামতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। প্রবল বৃষ্টিতে ওই উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতর পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে, বৃষ্টিতে কাপ্তাই উপজেলায় ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের মূরালী পাড়া নামক এলাকায় সড়কে পাহাড় ধস হয়। তবে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়নি।
কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রুহুল আমিন বলেন, ‘ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের মূরালী পাড়া নামক এলাকায় পাহাড় ধসে পড়লেও সড়ক যোগাযোগ এখনো চালু রয়েছে।’
তবে সড়কে ধসে পড়া মাটি পানি দিয়ে সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানান তিনি। প্রবল বৃষ্টিতে জুরাছড়ি উপজেলার যক্ষা বাজারে দুপুরে সড়ক ধসে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ধসে পড়ায় উপজেলা সদরের সাথে ওই এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে পাহাড়ি ঢলে জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামুরাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জুরাছড়ির জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
জুরাছড়ি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রূপময় চাকমা জানান, গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের জামুরাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।
বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘টানা বৃষ্টিপাতে জুরাছড়ি, বনযোগীছড়া, মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে বসত ঘর প্লাবিত এবং ধানি জমিসহ বিভিন্ন শাক-সবজি পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে, ৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।’
রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে সড়ক বিভাগের প্রায় ১৫টি পয়েন্টে পাহাড়ধসে সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তবে তাৎক্ষণিকভাবেই সবগুলো পয়েন্ট মাটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ করেছে সড়ক বিভাগ। সব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
তবে এলজিইডি’র অধীনে নির্মিত যক্ষা বাজার ও কাউখালী-ঘিলাছড়ি সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে তিনি নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে এই দুইটি সড়ক দিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রাঙামাটি প্রশাসনের তথ্য অনুযাযী, জেলায় মোট ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছে ৬৭২ জন। টানা বর্ষণে এই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩টি বসত ঘর। যা আরও বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬২৮০ হেক্টর জমি। জেলায় ৫৪০ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমালের কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেজন্য প্রশাসন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে, জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাচালং নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ১২-১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় টানা বর্ষণে বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড পূর্ব লাইল্যাঘোনা গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি ও রাস্তা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া, পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের এফ ব্লক এলাকার সংযোগ সড়ক প্লাবিত ও মধ্যমপাড়া থেকে কাচালং কলেজ সড়কসহ আরও কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সব কৃষিজমি ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আখতার বলেন, ‘উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এখনো কি পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসন দিন রাত কাজ করছে। প্রশাসন থেকে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। এ ছাড়া, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার থেকে ৫৪০ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাননি বলে জানান জেলা প্রশাসক।
ঢাকা এক্সপ্রেস/এনএ