ঢাকা, রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

পর্যটনে ঈদের চমক: শ্রীমঙ্গলে ১০ কোটি টাকার বাণিজ্য

এম এ রকিব, মৌলভীবাজার

প্রকাশ: ১৮:৩৬, ১৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৯:০৩, ১৪ জুন ২০২৫

পর্যটনে ঈদের চমক: শ্রীমঙ্গলে ১০ কোটি টাকার বাণিজ্য

ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের ভীড় । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

পবিত্র ঈদুল আযহার লম্বা ছুটিতে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ভিড় করেন সবুজ পাহাড়-টিলা, চা-বাগান আর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই শহরে। এই পর্যটন মৌসুমে বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মতো।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সহজ ট্রেন ও বাস যোগাযোগ থাকার কারণে শ্রীমঙ্গল অনেকের পছন্দের জায়গা হয়ে ওঠে। অন্যদিকে দেশের অনেক পর্যটন এলাকায় উন্নত অবকাঠামো না থাকায় শ্রীমঙ্গলের সাজানো প্রকৃতি অনেকের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাই ঈদের ছুটির শুরু থেকেই শহরজুড়ে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের ঈদের ছুটি শুরু হয় ৫ জুন থেকে। ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় রিসোর্টগুলোতে আগেভাগেই রুম বুক করে ফেলেন বিভিন্ন ধর্মের পর্যটকরা। ঈদের দিন ও পরবর্তী দিন থেকে শ্রীমঙ্গলের প্রায় সব হোটেল ও রিসোর্টে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এবারের ছুটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক আসায় অনেক ব্যবসায়ী ও কর্তৃপক্ষ হিমশিম খেয়েছেন।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ৫০ হাজার মানুষ যদি গড়ে ২ হাজার টাকা করে খরচ করেন, তাহলে মোট বাণিজ্য হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে সবটাই লাভ নয়। অতিরিক্ত ভিড় আর তীব্র গরমে সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।

তীব্র গরম থাকলেও বৃষ্টি বা বৈরী আবহাওয়া ছিল না। ফলে দর্শনার্থীরা ঘুরেছেন চা-বাগান, বধ্যভূমি-৭১, সেভেন লেয়ারের নীলকণ্ঠ চা কেবিন, দার্জিলিং ঠিলা, হরিণছড়া গল্ফ মাঠ, চা-কন্যা ভাস্কর্য, হাইল হাওরের বাইক্কা বিল, মিনি চিড়িয়াখানা, লাল পাহাড়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রপাত ও মাধবপুর লেকসহ অর্ধশতাধিক জনপ্রিয় জায়গায়। গরমে কষ্ট হয়েছে, কিন্তু ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহ কমেনি।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৭ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৯৫০ জন পর্যটক প্রবেশ করেছেন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৩ টাকা।

তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই বিশাল ভিড়ে লাউয়াছড়ার পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। তারা জানান, আশপাশে অবাধ গাছ কাটা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাস হুমকির মুখে পড়ছে।

স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলেন, লাউয়াছড়াকে ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক রিসোর্ট, হোটেল ও ইকো কটেজে পর্যটকদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। রাধানগরসহ আশপাশের পর্যটন গ্রামগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট—সবখানেই ভালো ব্যবসা হয়েছে।

লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা ও সাংবাদিক সাজু মারচিয়াঙ বলেন, একসাথে অতিরিক্ত দর্শনার্থীর ভিড় ও যানবাহনের চাপে বন্যপ্রাণী দেখা কঠিন হয়ে পড়ছে। হইচই আর বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে জীববৈচিত্র্য কিছুটা হুমকিতে পড়েছে।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কামরুল হাসান, সিলেটের শিক্ষিকা ডলি আক্তারসহ অনেক দর্শনার্থী বলেন, শহরে এমন খোলামেলা পরিবেশ এখন আর পাওয়া যায় না। শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা-বাগান আর রিসোর্টের সুযোগ-সুবিধা দেখে তারা মুগ্ধ। বিশেষ করে বাচ্চারা প্রকৃতির মাঝে আনন্দে সময় কাটিয়েছে। এই ভ্রমণ তারা অনেকদিন মনে রাখবেন।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য সচিব ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক মো. সেলিম আহমদ বলেন, শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সবাই নিজ গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন। এরপর কিছুদিন একটু হাহাকার থাকবে। তিনি বলেন, এবারে অন্তত ৫০ হাজার লোক শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করেছেন। এত মানুষকে সেবা দিতে দক্ষ অপারেটরের ঘাটতি ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতিটি স্পটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল চালু ছিল। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লাউয়াছড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হক জানান, বনকর্মী, সিপিজি, ট্যুরিস্ট গাইড, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ভ্রমণ ও নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আল্লাহর রহমতে তা সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এবারের ঈদে ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক শ্রীমঙ্গল ঘুরেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাও ছিলেন।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ

আরও পড়ুন