ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

দুই গ্রুপের বিরোধে বাড্ডায় বিএনপি নেতা সাধন খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ০৯:১৯, ২৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৩:২০, ২৭ মে ২০২৫

দুই গ্রুপের বিরোধে বাড্ডায় বিএনপি নেতা সাধন খুন

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডায় জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনকে। রবিবার (২৫ মে) রাত ১০টার দিকে মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাট এলাকার চার নম্বর সড়কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যায় অংশ নেয় চারজন, যাদের মধ্যে দুজন সরাসরি গুলি করে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, আর হত্যার পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব না কি ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ আধিপত্য— সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সাধন চারজন বন্ধুর সঙ্গে রাস্তার পাশে একটি দোকানের সামনে চেয়ারে বসেছিলেন। মাত্র পাঁচ-ছয় মিনিট পরই লেকপাড়ের দিক থেকে হেঁটে আসে দুই যুবক। তাদের একজন খুব কাছ থেকে গুলি চালায় সাধনের দিকে, সঙ্গে থাকা অন্যজনও গুলি করে। সাধন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর ধীরে-সুস্থে তারা পাশের গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। আশপাশে মানুষ থাকলেও কেউ বাধা দেয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে বাড্ডার কুখ্যাত ‘মেহেদী গ্রুপ’ জড়িত। এই গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যবাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি, কেবল ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং দোকান বরাদ্দ বাণিজ্যে জড়িত। এই গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন ডালিম, রবিন ও মাহবুব। নিহত সাধন ছিলেন রবিন গ্রুপের ঘনিষ্ঠ। গ্রুপের মাহবুবের মামা তিনি। তার ইন্টারনেট ব্যবসায়ও এই গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলে জানিয়েছে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। মেহেদী গ্রুপের অনুসারীরা গত বৃহস্পতিবারও সাধনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।

পুলিশ বলছে, ডিএনসিসি মার্কেটে দোকান বরাদ্দ, ইন্টারনেট ব্যবসা এবং এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুটি গ্রুপের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছিল। সাধনের ওপর হামলা হতে পারে— এমন আশঙ্কা আগেই স্থানীয়ভাবে ঘুরছিল বলে জানা গেছে।

তদন্তে জানা গেছে, গুলি চালানো দুই যুবকের ছবি এক সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে রয়েছে। তবে তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সম্পর্কের পোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, এই বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

পুলিশের মতে, এই হত্যাকাণ্ড একটি ধারাবাহিক ‘কিলিং মিশনের’ অংশ হতে পারে। এর আগে ২১ মার্চ গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে ইন্টারনেট ব্যবসায়ী টেলি সুমনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সুমনের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে সাধনকে টার্গেট করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

সাধনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার জানান, ঘটনার আগমুহূর্তে বাসায় ফিরে তিনি নামাজ আদায় করছিলেন। এ সময় স্বামী ফোনে কথা বলেন এবং বাসার অদূরে দোকানের কাছে যেতে বলে কেউ। এর ২০-২৫ মিনিট পরই গুলির খবর পান তিনি। রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে লাশ এনে উত্তরা কামারপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার তারেক মাহমুদ জানান, দুই শুটারকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ছাড়া হত্যায় জড়িত অন্য সহযোগীদের খোঁজেও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন