শিরোনাম
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:৪৩, ২ মে ২০২৫
জন্মদিনে বাড়িতে কোনও রকম এলাহি আয়োজন পছন্দ করতেন না সত্যজিৎ রায়। তবে সত্যজিৎ পত্নী বিজয়া রায় ছিলেন খুব ভাল রাঁধুনি। বিভিন্ন ধরনের রান্নায় পারদর্শী ছিলেন। সন্দীপ রায় বলেন,‘বাবার জন্মদিনে তাঁর প্রিয় খাবারগুলোই মা নিজের হাতে রান্না করার চেষ্টা করতেন। যেমন লুচি ছিল বাবার খুবই পছন্দের। সঙ্গে আলুর দম। না হলে থাকত মাংসের কোনও পদ। মা সে দিন বাবার জন্য পায়েসও বানাতেন। বাবার লেখা গল্পে বা পরিচালিত ছবিতে বিভিন্ন খাবার এবং আড্ডার কথা বার বার এসেছে। যে সব খাবার নিজের পছন্দ ছিল, সে সবই বেশি করে আসত ওনার লেখা বা ছবিতে।’
সত্যজিৎ রায় যে খাদ্যরসিক ছিলেন, তেমনটা বলতে পারবেন না। সব সময়ই নাকি খুব দ্রুত খাবার খেতেন। কখনও রসিয়ে রসিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে কোনও খাবার খাওয়ায় মন ছিল না। আসলে কাজের মধ্যেই থাকতেন বেশি সময়টা। সন্দীপ রায় বলেন,‘আমাদের বাড়িতে মূলত বাঙালি খাবারের চল ছিল বেশি। এখনও তেমনটাই আছে। আসলে বাবা বাঙালি খাবার খেতে বেশি পছন্দ করতেন। খুবই ডাল-ভক্ত ছিলেন বাবা। তবে সব ডাল মোটেই নয়। সোনামুগের ডাল, অড়হড় ডাল এবং ছোলার ডাল ছিল বাবার অত্যন্ত প্রিয়। এরই সঙ্গে ইলিশ মাছ এবং পাঁঠার মাংসের বিভিন্ন রান্না বাবা খুব পছন্দ করতেন। আর বাড়িতে দুপুরে খাবারের শেষে বাবার পাতে মিষ্টি দই ছিল মাস্ট। মরসুমে নতুন গুড়ও থাকত। নকুড় এবং ভীম নাগের নতুন গুড়ের সন্দেশ ছিল তাঁর প্রিয়। নতুন গুড়ের মিষ্টি পেলে অন্য মিষ্টি খেতেনই না।’
সত্যজিৎ রায় সিংহভাগ বাঙালির মতো ভাতের ভক্ত ছিলেন না। বরং রুটি খেতে বেশি পছন্দ করতেন। তাই দুপুরে বাড়িতে ভাত খেলেও রাতে রুটিই খেতেন। তবে মোটের উপর সাধারণ ঘরোয়া খাবারই ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদিনের পছন্দ। খিচুড়ি, ভাতে ভাত— এ সব খেতে খুব পছন্দ করতেন। খুব ব্যস্ততার মধ্যে হয়তো দুপুরে অল্প সময়ের জন্য বাড়িতে ফিরেছেন। ভাতে ভাত পেলেই তিনি খুশি। চট করে খাওয়া সেরে নিতে পারতেন। আবার একটু মেঘলা হলেই বাড়িতে ফিরেই ঘোষণা করতেন, ‘‘কী, আজ খিচুড়ি তো?’’
অনেকেই হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, সত্যজিৎ রায়ের পছন্দের খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে ফেলুদা, জটায়ু এবং তোপসের খাওয়াদাওয়ার খুবই মিল রয়েছে। আসলে সত্যজিৎ রায় যা খেতে পছন্দ করতেন, সেই পদগুলিই তিনি ফেলুদার পছন্দের তালিকায় দিয়েছিলেন।
জন্মদিন সত্যজিৎ রায় সাধারণত বাড়িতেই কাটাতে পছন্দ করতেন। ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুবান্ধব দেখা করতে আসতেন। সঙ্গে আনতেন মিষ্টি এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারদাবার। খুব আড্ডা হত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জন্মদিনে বাড়িতে ভিড় বাড়তে শুরু করল। সত্যজিৎ পুত্র বলেন,‘বাবার তখন শরীর বেশ খারাপ। খাওয়াদাওয়ার উপরেও একটু নিয়ন্ত্রণ চলে এল। বাড়িতে রান্না করা কচি পাঁঠার ঝোল বাবা খুব তৃপ্তি করেই খেতেন। কিন্তু মনে আছে, শারীরিক কারণে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছিলেন পাঁঠার মাংস বাদ দিতে। তার পরিবর্তে চলে এল মুরগির মাংস। সেই পরামর্শ বাবা যে খুব একটা পছন্দ করেছিলেন, তা মনে হয় না। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন বাবা। শেষের দিকে সপ্তাহে এক দিন মাত্র পাঁঠার মাংস খেতেন। আমাদের বাড়িতে পাঁঠা এবং মুরগি-দু’রকমই মাংস নিয়মিত হত। কিন্তু বাবাকে যদি দুটোর মধ্যে বেছে নিতে বলা হত, তা হলে তাঁর ভোট পেত পাঁঠার মাংস। বিভিন্ন রকমের মাংসের পদের কথাও বাবার লেখা বিভিন্ন গল্পে রয়েছে।’