শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:৫৯, ৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১২, ৯ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ এবং স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা। অনেকেই সকালে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাসায়ই থেকে গেছেন। দিনমজুর, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছেন চরম দুর্দশায়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে সেটিকে অতিভারি বৃষ্টিপাত বলে আবহাওয়া অফিস।
এদিন বৃষ্টি দিয়ে সকাল শুরু হলেও বেলা বাড়ার পর বৃষ্টি ঝরে থেমে থেমে। অনেক জায়গায় সময়মতো যানবাহন পাওয়া যায়নি। যানবাহন পেলেও বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও যাত্রী সংকটে পড়েছেন পরিবনহনগুলো। আবার কোনো সড়ক ও অলিগলিতেও পানি জমার কারণে সেখানকার বাসিন্দারা পড়েন বিপাকে।
মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ভাটারা, নতুন বাজার, নিউ মার্কেট, খিলগাঁও, নিকেতনসহ কিছু এলাকার সড়কে পানি জমে। তবে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা আফরোজা সুলতানা শোভা গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সকালে বৃষ্টি থাকায় অফিস যেতে দেরি হয়েছে তার। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে কিছুটা ভিজেছি। এরপর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই অর্ধেক ভিজে গেছি। এমন বৃষ্টি, ছাতা মানছিল না। গাড়িতে উঠাও কষ্টকর ছিল। পানি ছিটায় প্যান্টও ভিজে গেছে। এখন বেশ ঠাণ্ডা লাগছে। অফিসে কাজ করার জন্য বসতেও পারছি না।
গণমাধ্যমকর্মী রানী ইসাবেলা ইশা বলেন, আমি মিরপুর-২-এ থাকি। মিরপুরে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যাতায়াতে খুবই অসুবিধা হয়। ফলে রাস্তায় জ্যামও থাকে প্রচুর। এসব কারণে অনেকসময়ই অফিস বা যার যার গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। আজকেই আমার অফিসে পৌঁছাতে এক ঘণ্টার মতো দেরি হয়েছে।
নিকেতনের বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বাসা থেকে বের হতে পারছিলাম না। আমাদের এলাকায় বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে, আজও জমেছে। তবে তা বেশিক্ষণ থাকেনি।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আদিব হাসান বলেন, খিলগাঁও সরকারি কলোনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আনসার কোয়ার্টার এবং আশপাশের এলাকায় বুধবার সকালে হাঁটু সমান পানি জমেছিল। এ কারণে ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। সড়কে পানি থাকায় হেঁটে আসতে পারিনি। রিকশায় মৌচাক পর্যন্ত এসেছি। অন্য সময় মৌচাক পর্যন্ত ৫০ টাকা ভাড়া নেয়, আজ ১০০ টাকা দিতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক লায়েকুজ্জামান বুধবার বলেন, রামপুরা থেকে উত্তরা, মিরপুর, মহাখালী, বাড্ডা হয়ে আবার রামপুরা গেছি। সেখান থেকে আবার মহাখালী আসছি। রাস্তায় কয়েক জায়গায় পানি ছিল কিন্তু খুব বেশি না। আজ রাস্তা অনেকটা ফাঁকা খুব বেশি লোকজন নাই।
মহাখালীতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভার থেকে রামপুরাগামী আলিফ পরিবহনের একটি বাসের প্রায় অর্ধেক আসন খালি দেখা গেছে। ওই বাসের হেলপার আলমগীর হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে যাত্রী নাই। এই সময় গাড়ির একটা সিটও ফাঁকা থাকে না। যাত্রীরা দাঁড়াই থাকে।
ঝিগাতলা এলাকার বাসিন্দা নিলয় জানান, সকাল থেকে ভিজতে ভিজতে অফিসে গেছি, আবার ভিজেই ফিরে এসেছি। ঠান্ডা-জ্বর হওয়ার ভয় আছে। নতুন রাস্তায় পানির পরিমাণ বাড়ছে, কোমর পানি হতে সময় লাগবে না।
বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রিকশাচালকরা। রাস্তায় যাত্রী নেই, ভাড়া মেলে না, আয়ের পথ বন্ধ। মালিবাগ এলাকায় দোকানের ছাউনির নিচে রিকশা ফেলে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকজন চালক। তাদের একজন হামিদ। তিনি বলেন, লোকজন বের হয় না, তাই ভাড়া পাই না। রিকশার চাকা না ঘুরলে খাওয়াও জোটে না। কয়েকদিন ধরে যা বৃষ্টি হচ্ছে, এতে না খেয়ে থাকতে হবে মনে হয়।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শাহিনুর রহমান বলেন, প্রতিবারই বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়। এবারো একই অবস্থা। একদিনের বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা। বাসা থেকে বের হতে পারি না। সিটি করপোরেশন শুধু আশ্বাস দেয়, কাজ করে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানালেন, সকাল থেকে যানবাহন পেতে খুব কষ্ট হয়েছে। তার ওপর রাস্তায় যানজট, সময়মতো ক্লাসে পৌঁছানোও কঠিন।
বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরাও। একজন যাত্রী জানান, মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য রাইড বুক করেছিলেন। কিন্তু যানজটে আটকে শাহবাগেই নামতে হয়েছে। চালক জানান, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছি। বুধবার সকাল থেকে কোনো ভাড়া পাচ্ছি না। এখন শরীর খারাপ লাগছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসসিসি জানিয়েছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারেণ রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বৃষ্টিপাত আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এ অবস্থায় ডিএসসিসি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা কাজ করছেন। তৈরি করা হয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম। ডিএসসিসির কোনো এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে জানানোর অনুরোধ করেছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান বুধবার বলেন, আজ এখন পর্যন্ত তেমন ভারি বৃষ্টি হয়নি। রাতে কয়েকটি জায়গায় বৃষ্টি হয়েছিল আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সেসব জায়গায় কাজ করেছেন। আর ভারী বৃষ্টি হতে পারে এজন্য সতর্কতা হিসেবে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, রাতে বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় সামান্য পানি জমেছিল। আমাদের কর্মীরা তা সরিয়ে দিয়েছেন। কোনো এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আসেনি। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় আছে। পানি জমলে তা সরাতে ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ