ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:২৩, ২৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১৯, ২৯ জুলাই ২০২৫

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত?

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বাঘ দিবস— একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা বিপন্ন এই শিকারির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি ও পদক্ষেপ গ্রহণের বার্তা দেয়। বিশ্বের ছয়টি বিদ্যমান উপপ্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে টিকে থাকা রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেবল জাতীয় গর্বের প্রতীকই নয়, বরং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রাণী। অথচ একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া এই প্রাণী আজ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের ক্যামেরা ট্র্যাপ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১১৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫-এ, যা প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। তবে এই সামান্য অর্জনের পেছনে রয়েছে বহু বছরের পরিকল্পনা, সুরক্ষা ব্যবস্থা, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং মানুষের সঙ্গে বাঘের দ্বন্দ্ব কমাতে নেওয়া নানা উদ্যোগ। বিশ্বের অন্য দেশগুলো যেখানে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশ্ব বাঘ দিবসের এই প্রেক্ষাপটে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ, বর্তমান সংখ্যা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনাই হয়ে উঠেছে সময়ের দাবি। 

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই বাঘ শুধু বনজ ইকোসিস্টেমের ভারসাম্যই রক্ষা করে না, পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণও। গত দেড় বছরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে চারবার সরাসরি বাঘের দেখা পেয়েছেন পর্যটকরা। কেউ কেউ ধরে ফেলেছেন ক্যামেরাতেও।

আজ ২৯ জুলাই, বিশ্ব বাঘ দিবস। ‘মানুষ-বাঘের সুরেলা সহাবস্থান’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বাঘের বংশবৃদ্ধির অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি।

একসময় পৃথিবীতে বাঘের নয়টি উপপ্রজাতি ছিল। কিন্তু শতাধিক বছর আগে এর তিনটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বর্তমানে টিকে আছে ছয়টি উপপ্রজাতির বাঘ। এর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যতম। বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার মাত্র কয়েকটি দেশের বনে-জঙ্গলে এই বাঘের বসবাস। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাগরঘেঁষা নোনা জলাভূমির বাদাবন-সুন্দরবন হচ্ছে বাঘের প্রধান বিচরণস্থল। এই বাঘকে বলা হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বাঘ একেবারে আলাদা বৈশিষ্ট্যের।

বন বিভাগ বলছে, গত পাঁচ বছরে করা দুটি আলাদা জরিপের মধ্যে দেখা গেছে; দেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, প্রকল্পভিত্তিক কার্যক্রম এবং বাঘ হত্যায় জিরো টলারেন্স নীতির কারণে এ সাফল্য এসেছে।

তবে এই অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক প্রতিকূলতা ও লড়াই। একসময় সুন্দরবনে বাঘ কমে গিয়েছিল গুপ্ত শিকারি, বনদস্যুদের উৎপাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অভয়ারণ্যে অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে। তবে অবস্থার পরিবর্তনে বন বিভাগ বাঘ রক্ষা প্রকল্প গ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা জোরদার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নেয় বিভিন্ন উদ্যোগ।

২০১৮ সালে বন বিভাগের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ধরা পড়েছিল ১১৪টি। এরপর ২০২৩ সালে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট রেঞ্জের ৬৩৯টি গ্রিডে বসানো হয় ক্যামেরা ট্র্যাপ। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৫। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাঘের বাসস্থান, খাদ্যের সংস্থান ও প্রজনন সক্ষমতা নিশ্চিত করাও জরুরি।

বন বিভাগের মতে, বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব কমাতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব কমাতে আমরা 'ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম' গঠন করেছি। পাশাপাশি খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ৭৪ কিলোমিটার এলাকায় ফেন্সিং স্থাপন করা হচ্ছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি আমরা। বাঘের সুপেয় পানি ও আবাসস্থল নিশ্চিত করার চেষ্টাও চলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে শুধু সুন্দরবন নয়, দেশের সমগ্র জীববৈচিত্র্যই উপকৃত হবে। আর সুন্দরবন টিকে থাকলে টিকে থাকবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারও।

একসময় পৃথিবী থেকে সবচেয়ে বড় মাংসাশী প্রাণী বাঘ বিলুপ্ত হতে চলেছিল। তখন বাঘ রক্ষায় ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গ শহরে বাঘ আছে এমন দেশগুলোকে নিয়ে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই বাঘ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ২৯ জুলাইকে বিশ্ব বাঘ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ঘোষণা অনুযায়ী, বাঘ রক্ষায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটান বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ালেও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ দিন দিন বনভূমি কমে যাওয়া এবং বনে চোরা শিকারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকেই দায়ী করছেন গবেষকরা।

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন